অপব্যাখ্যাত আয়াত ৫ঃ৮২- ইহুদী ও মুশরিকরা মুসলমানদের প্রতি সবেচেয়ে বেশী বিদ্বেষ পোষণ করে।-আইনুল বারী
৯৮. অপব্যাখ্যাত
আয়াত ৫ঃ৮২- ইহুদী ও মুশরিকরা মুসলমানদের
প্রতি সবেচেয়ে বেশী বিদ্বেষ পোষণ করে।-আইনুল বারী
----------------------------------------------
‘নিশ্চয় তুমি দেখবে বিশ্বাসীদের (মুসলমানদের) প্রতি বিরোধিতায়/শত্রুতা পোষণে
মানুষের মাঝে সবচেয়ে উগ্র হলো ইহুদীরা ও মুশরিকরা (বহু দেব-দেবীর পূজারীরা) ; আর যারা বলে, 'আমরা খৃষ্টান', তাদেরকে বিশ্বাসীদের (মুসলমানদের) প্রতি অধিক বন্ধুত্বসুলভ দেখবে, কেননা তাদের মাঝে ধর্মযাজক ও সন্ন্যাসী রয়েছে, যারা অহংকারী নয়।’-সূরাহ মাইদাহ(অধ্যায়-৫),আয়াত-৮২
কুর'আনের এই আয়াতটি অপব্যাখ্যাত হয়ে থাকে। এই অপব্যাখ্যার ফলে সমাজে উগ্র
সাম্প্রদায়িকতার বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে।
এই আয়াতে আল্লাহ মুসলমানদের কাছে একটি
দুঃখজনক বাস্তবতাকে ব্যাক্ত করেছেন। দুটি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে, মুসলমানেরা সব চেয়ে বেশি বিরোধিতা-বিদ্বেষের শিকার হবে। এটি একটি নির্মম
বাস্তবতার ভবিষ্যৎবাণীও বটে। নবী
মোহাম্মদ (তাঁর প্রতি শান্তি)-এর সময় যে নির্মম বাস্তবতা ছিলো ছিলো, ভবিষ্যতেও তেমনই হবে।কাজেই বলা যায় এটি একটি মিরাকেল আয়াত, যা এই দুই সম্প্রদায়ের প্রতি কুর'আনের
আয়াতকে ভুল প্রমাণের সুযোগ দেয়া একটি চ্যালেঞ্জও নিশ্চয়। তবে এটিও ভুল ব্যাখ্যা
হবে, যদি মনে করা হয় সম্প্রদায়দুটির সকল মানুষের উপর দোষারোপ করা হয়েছে। এটি সাধারণ মনস্তত্ত্ব, যার জন্যে সবাই দায়ী নয়, ইহুদী ও
মুশরিকদের মধ্যেও ভালো মানুষ
আছেন, তাদের মধ্যেও হেদায়েত সুযোগ আছে।
এখন, অপব্যাখ্যা থেকে যে খারাপ মূল্যায়নটি করা হয় তা হলো, যেহেতু মুসলমানদের সাথে ইহুদী ও মুশরিকরা সবচেয়ে বেশি শত্রুতা পোষণ করে,
অতএব তাদের
প্রতিও ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করা যৌক্তিক বা উচিত। তাদেরকে মনেপ্রাণে আজীবন শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে পাল্টা জবাব দেয়া
উচিত। অথচ এই আয়াতে বা অন্য কোনো আয়াতে আল্লাহ এমন কোনো নির্দেশ দেন নি, ঘৃণার বদলে ঘৃণার নির্দেশ কোথাও নেই। আল্লাহ যেমন মুসলমানদেরকে অন্য
সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি প্রতিশোধ
পরায়ণ হতে বলেন নি, তেমনি বরং অন্য সম্প্রদায়ের উগ্র মানুষের সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-আক্রোশ থেকে বেঁচে থাকার
অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ।
কেনো ইহুদী
ও মুশরিকরা মুসলমানদের প্রতি অতি মাত্রায় বিদ্বেষ পোষণ করে?
৫ঃ২৮ আয়াত
থেকে ধারণা করা যায়, এই বিদ্বেষের পেছনে মূল কারণ অহংকার।
সাম্প্রদায়িক চেতনা যদি অতি মাত্রায় অহংকারী করে তোলে, তখন উক্ত সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীকে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ করে তুলতে
পারে। অথচ এই অহংকার হঠকারিতা, বোকামি ও
শান্তি ভঙ্গের কারণ হতে পারে। একজন প্রকৃত বিশ্বাসী মুসলমানের উচিত নয় এ ধরণের উগ্র সাম্প্রদায়িক আচরণ করা। আল্লাহ বলেছেন,
‘বিশ্বাসীগণ! যদি কোনো নীতিহীন(মন্দ)ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে
আসে, তখন তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করতে প্রবৃত্ত না হও, আর পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে না অনুতপ্ত হও।'-সূরাহ হুযুরাত(অধ্যায়-৪৯),আয়াত-৬
‘এমন হতে পারে আল্লাহ তোমাদের ও তোমাদের সাথে যাদের শত্রুতা তাদের মাঝে
ভালোবাসার(বন্ধুত্বের) সম্পর্ক স্থাপন করে দিবেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান, এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।’-সূরাহ আল-মুমতাহানাহ,অধ্যায়-৬০,আয়াত-৭
'আর দেব-দেবীর (বহুত্ববাদী) পূজারীরা কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা
করে, তবে তাকে আশ্রয় দিবে, যাতে সে আল্লাহর বাণী শুনতে পায়,
তারপর তাকে
তার নিরাপদ স্থানে পৌছে দেবে। এটি এজন্যে যে তারা জ্ঞান রাখে না।'-সূরাহ তওবা (অধ্যায়-৯),আয়াত-৬
যা খারাপ
তাতো সকলের জন্যেই খারাপ। সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বিরুদ্ধে মুসলমান সমাজের উচিত দুঃসময়ে
ধৈর্য ধারণ করা, সব চেয়ে ভালো উপায়ে কথা বলা, প্রজ্ঞাকে কাজে লাগানো, ভালো দিয়ে
খারাপকে পালটে দেয়ার চেষ্টা করা, উদারনৈতিকভাবে
ক্ষমা করা, আত্মরক্ষা্র জন্য ও অধিকার আদায়ে ন্যায়
সঙ্গত আচরণ করা। আল্লাহের উপর ভরসা রাখা। শেষ পর্যন্ত সত্যেরইতো জয় হয়, তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের শক্তি টিকে থাকবে।
Comments
Post a Comment