ন্যায়পরায়ণতা, মানবতাবাদ সংক্রান্ত কুর'আনের কতিপয় আয়াত- আইনুল বারী

৯৫.ন্যায়পরায়ণতা, মানবতাবাদ সংক্রান্ত কুর'আনের কতিপয় আয়াত-

কুর'আন মানবজাতির ন্য জীবন যাপনের সোজা পথের সর্বোত্তম পথ-নির্দেশিকা। কুর'আনের আয়াতগুলি একটু মনোযোগের সাথে পাঠ করলে আমাদের উপলব্ধিতে আসতো, ইসলাম ধর্ম শুধু  নামায, রোজা হজ্ব, জাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি সৎ জীবন যাপনের কর্মশীলতার ধর্ম। এ ধর্মের মূল প্রতিপাদ্য হলো মানবতাবোধ, ন্যায়বিচার, সত্যবাদিতা, সততা।

এখানে ন্যায়বিচার ও মানবতাবাদ সম্পর্কে কুর'আনের কতিপয় আয়াত তুলে ধরা হলোঃ

হে বিশ্বাসীরা! আল্লাহর স্বাক্ষীরূপে ন্যায় বিচারে দৃঢ় থাকো, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে যায় অথবা মাতা-পিতা আত্মীয়-স্বজনদের বিরুদ্ধেও যদিবা সে ধনী বা গরীব হয়, আল্লাহ উভয়ের প্রতিই দয়ালু সুতরাং ব্যক্তিগত কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না পাছে তোমারা ন্যায় বিচার থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়ো আর যদি তোমরা তা করো বা এড়িয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কৃতকর্মের খবর রাখেন’ -সুরাহ নিসা আয়াত-১৩৫

জন্য আমি বনী ইসরাঈলের প্রতি নির্দেশ দিলাম যে,নরহত্যা বা ধ্বংসাত্মক কাজ ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেনো হত্যা করলো দুনিয়ার সকল মানুষকে, আর যে কেউ কারো জীবন রক্ষা করলো সে যেনো সকলের জীবনরক্ষা করলো, তাদের কাছে তো রাসুলরা নিদর্শনসহ আগমন করেছিলেন, কিনতু এরপরও অনেকেই দুনিয়ায় সীমা লংঘন করে’-সুরাহ মা-য়িদাহ /আয়াত ৩২

'... প্রাণ কেড়ে নিয়ো না যা আল্লাহ পবিত্র করেছেন,আইন বিচারের পথ ছাড়া ভাবেই তিনি তোমাদের নির্দেশ করেন, যেনো তোমরা প্রজ্ঞা লাভ করতে পারো' -সুরাহ আন'আম, ৬ঃ১৫১

' আমার জাতি ! ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ঠিক মতো পরিমাপ করো ওজন দাও, এবং (প্রতারণামূলকভাবে) লোকজনের জিনিসপত্রের কোনোরূপ ক্ষতি করো না, পৃথিবীতে/দেশে অনিষ্ট/নাশকতা করো না,দূর্নীতি করো না'
-সুরাহ হুদ,১১ঃ৮৫

ধর্মের কারণে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদয় হতে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়সঙ্গত আচরণকারীদেরকে ভালবাসেন’ -সূরাহ আল-মুমতাহানাহ,অধ্যায়-৬০,আয়াত-

আল্লাহ তোমাদেরকে (বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়তে) নিষেধ করেন, কেবল যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্কার কাজে সহযোগিতার জোট বেঁধেছে আর যারা তাদের সাথে সহযোগিতার জোট বাঁধে, তারা অন্যায়কারী’-সূরাহ আল-মুমতাহানাহ,অধ্যায়-৬০,আয়াত-

‘আর যখন আমি তোমাদের কাছ থেকে অংগীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা নিজেদের মধ্যে রক্তপাত করো না, আর তোমাদের বাসভূমি থেকে নিজেদের লোকদেরকে বের করে দিয়ো না; তখন তোমরা তা স্বীকার করেছিলে এবং তোমরা তার সাক্ষ্য দিয়েছিলে।’-সূরাহ বাক্বারাহ, অধ্যায়-, আয়াত-

'তারপর তোমরাই একে অন্যকে হত্যা করছো, এবং তোমাদেরই একদলকে তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করছো, তাদের বিরুদ্ধে পাপ অন্যায়ের মাধ্যমে পরষ্পর সহযোগিতা করছো আর তারা কেউ যদি তোমাদের কাছে যুদ্ধবন্দী হয়ে আসে, তবে মুক্তিপণ/বিনিময় নিয়ে বন্দীমুক্তি দিচ্ছো হয়ে, অথচ তাদের বহিষ্কার করাই তোমাদের জন্য ছিলো নিষিদ্ধ (অবৈধ) তবে কি তোমরা গ্রন্থের কিছু অংশ বিশ্বাস করো, আর কিছু অংশ অবিশ্বাস করো? তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের জন্য পার্থিব জীবনে দুর্ভোগ ছাড়া আর কী ক্ষতিপূরণ আছে; আর পূনরুত্থানের দিনে তাদের জন্য আছে ভয়াবহ পরিণতি আর তোমরা যা করো সে বিষয়ে আল্লাহ অজ্ঞাত নন'
-সূরাহ বাক্বারাহ, অধ্যায়- আয়াত-৮৫

'যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হাত বাড়াও, তবুও আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে আমার হাত বাড়াবো না কেননা, আমি বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি'
-সুরাহ আল-মাইদাহ, অধ্যায়-, আয়াত-২৮

ওহে বিশ্বাসীগণ! আল্লাহর জন্য অবিচল থেকো ন্যায় সাক্ষী রূপে,আর অন্যের(কোনো সম্প্রদায়ের) ঘৃণার কারণে নিজেকে ন্যায়বিচার থেকে বিরত রেখো নাসুবিচার করোঃএটাই আল্লাহ সচেতনতার (তাকওয়া)অধিক নিকটবর্তী, আল্লাহ সচেতন হও(ধার্মিক হও)তোমরা যা করো নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন
- সূরাহ মা'ইদা(অধ্যায়-),আয়াত-

'সুতরাং আপনি (আল্লাহর পথে মানুষকে) দাওয়াত দিতে থাকুন, আর আল্লাহর নির্দেশিত পথে অবিচল থাকুন; আপনি তাদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করবেন না বলুন, 'আল্লাহ গ্রন্থে যা প্রত্যাদেশ করেছেন তাতে আমি বিশ্বাস করি, আর আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা তোমাদের পালনকর্তা আমাদের জন্যে আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কর্ম আমাদের মধ্যে তোমাদের মাঝে কোনো বিবাদ নেই আল্লাহ আমাদের সবাইকে সমবেত করবেন আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন'
-সূরাহ আশ-শুরা(অধ্যায়-৪২),আয়াত-১৫

কিন্তু যদি তারা আপনার কথায় সাড়া না দেয়,তবে জানবেন,তারা শুধু তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেআর যে আল্লাহর পথনির্দেশনা(হেদায়েত) ছেড়ে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ নীতিহীন(অন্যায়কারী,পথভ্রষ্ট) জাতিকে/ সম্প্রদায়কে/লোকদের পথ দেখান না
-সূরাহ কাসাস(কাহিনীসমূহ)(অধ্যায়-২৮),আয়াত-৫০

আর যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি(অন্যায়) করো না,
তারা বলেঃ আমরাতো কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী (অবস্থার উন্নতির জন্য সংস্কার সাধন করছি)
মনে রেখো, বাস্তবিকই তারাই বিপর্যয়সৃষ্টিকারী(অন্যায়কারী),কিন্তু তারা উপলব্ধি করে না
-সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-),আয়াত-১১,১২

'আর আমি বনী ইসরাঈলকে গ্রন্থে বলে দিয়েছি যে,'তোমরা পৃথিবীর বুকে দু'বার অনর্থ(অন্যায়/বিপর্যয়) সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরণেরর অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে'
-সূরাহ ইসরা(রাতের ভ্রমণ)(অধ্যায়-১৭),আয়াত-

'যারা আল্লাহর নির্দেশ/আইন মেনে নেয়ার পর (বা তার অংগীকার করার পর) সেই দৃঢ় চুক্তি/প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এবং আল্লাহ যা অবিচ্ছিন্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে,আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করেঃ তারাই ব্যর্থ।'-সূরাহ বাক্বারাহ,অধ্যায়-২, আয়াত-২৭

'আর আপনার প্রতিপালক যখন ফেরশতাদের বললেনঃ বাস্তবিকই আমি পৃথিবীতে  এক প্রতিনিধি/ভাইসরয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছি,তারা বললোঃ আপনি কি এখানে এমন কাউকে  প্রতিষ্ঠা করবেন যে দূর্নীতি-অন্যায় ছড়িয়ে বেড়াবে,আর রক্তপাত ঘটাবে? যখন আমরা আপনার প্রশংসারত ও আপনার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি? তিনি বলেলেনঃ নিশ্চয় আমি যা জানি তা তোমরা জানো না।' 
-সূরাহ বাক্বারাহ, অধ্যায়-২, আয়াত-৩০

‘আর ফিরে গিয়ে,  জমিনে তার চেষ্টা থাকে অনিষ্ট সাধন করা, শস্যক্ষেত ও জীবজন্তু ধ্বংস করা; আর আল্লাহ অন্যায় পছন্দ করেন না।’-সূরাহ বাক্বারাহ, অধ্যায়-, আয়াত-২০৫

দুনিয়া ও পরকাল সম্পর্কে; আর তারা অনাথদের ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞেস করে,বলুনঃ তাদের পুর্নবাসনই শ্রেয়তর, আর যদি তাদেরকে তোমাদের সাথে নাও তবে তারা তোমাদেরই ভাই; আল্লাহ জানেন কে অনিষ্টকারী, কে সংস্কারকামী(কল্যাণকারী); আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন নিশ্চয় তিনি তোমাদেরকে বিপদের মধ্যে ফেলতে পারতেন; আল্লাহ পরাক্রমশালী,প্রজ্ঞাময়।
-সূরাহ বাক্বারাহ, অধ্যায়-২, আয়াত-২২০


মন্তব্যঃ পুনর্বাসনকথাটি ভাগ্যোন্নয়নের জন্য অধিকার রক্ষায় সংস্কার সাধন করা অর্থে নেয়াটাই বেশি কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করে বলে আমার মনে হয়েছে।

আর তোমার কাছে কি বিবদমানদের কাহিনী পৌঁচেছে?
যখন তারা দেয়াল ডিঙ্গিয়ে খাস কামরায়(অন্দরমহলে) প্রবেশ করেছিলো!
যখন তারা দাউদের কাছে পৌঁছুলো, আর তখন তাদেরকে দেখে সে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো;
তারা বললো, ভয় পাবেন না, আমরা বিবদমান দুই পক্ষ,
যাদের মধ্যে একজন অন্যের প্রতি অন্যায় করেছে,
সেজন্যে আমাদের মাঝে সঠিক মীমাংসা করে দিন, অন্যায় করবেন না;
আর আমাদেরকে নির্ভেজাল পথ দেখিয়ে দিন।
এ হলো আমার ভাই,
তার আছে নিরানব্বইটি ভেড়া, আর আমার কাছে একটি মাত্র ভেড়া,
তবু সে বলছে, ওটাকে আমার কাছে দিয়ে দাও,
সে কথা দিয়ে আমাকে কাবু করেছে।
সে (দাউদ) বললো, নিঃসন্দেহে সে তোমার প্রতি অন্যায় করেছে
তার ভেড়াগুলির সাথে তোমার ভেড়াটি দাবী করে;
আর নিশ্চয় অংশীদারদের অনেকেই একে অন্যের প্রতি অবিচার করে;
তবে যারা বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল তারা ব্যতিক্রম,
কিন্তু তারা সংখ্যায় কতো না কম!
আর দাউদের মনে হলো, আমি তাকে পরীক্ষা করছি;
আর তাই সে তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করলো,
আর সে বিনীত হলো ও গভীর শ্রদ্ধাভরে প্রণত হলো (সেজদায় পড়লো),
আর অনুশোচনায় ফিরে এলো।
আমি তাকে ক্ষমা করলাম, আর নিশ্চয় আমার কাছে তা জন্যে রয়েছে নৈকট্য,
আর সুন্দর প্রত্যাবর্তনস্থল।'
হে দাউদ! নিশ্চয় আমি তোমাকে পৃথিবীতে
একজন প্রতিনিধি(ভাইসরয়) করেছি;
অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার করো,
আর খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না,
তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে;
নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত হয়,
তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে,
তারা হিসাবের দিনকে ভূলে যায়।
-সূরাহ সাদ(অধ্যায়-৩৮),আয়াত-২১ হতে ২৬

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

আল্লাহ সব কিছু দেখেন, সবকিছু শোনেন, আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন সব কিছুর স্বাক্ষীঃ বিশ্বাস ও অবিশ্বাস -আইনুল বারী