ইসলাম ধর্মে কবিতা কি নিষিদ্ধ? কবিরা বিভ্রান্ত? -আইনুল বারী
৮৯. ইসলাম ধর্মে কবিতা কি নিষিদ্ধ? কবিরা বিভ্রান্ত?
-আইনুল বারী
-- --- ---- ---
১) কুর’আন চূড়ান্ত সত্য নির্দেশক, ফুরক্বান। নবীরা প্রবঞ্চক নন। কাজেই পরষ্পর বিরোধী হাদিসের আলোচনায় যাবো না, সূরাহ আশশুয়ারায় ২২৪ থেকে ২২৭ নং আয়াতে আল্লাহ কবিদের প্রসঙ্গে ওহী নাযিল করেছেন। সুস্পষ্ট বাণী, অথচ অপব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি টিকে আছে যুগ যুগ ধরে। ইসলাম ধর্মে কবিতা নিষিদ্ধ, কবিরা বিভ্রান্ত, এটি সেই বিভ্রান্তি।
'কবিদের প্রসঙ্গে, বিভ্রান্ত লোকেরাই তাদেরকে অনুসরণ করে।'
'তুমি কি দেখো না, তারা প্রত্যেক উপত্যকায় দিশেহারা হয়ে বিচরণ করে?'
'আর এমন কথা বলে, যা তারা করে না?' 'তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস এনেছে ও সৎ কর্ম করে...।'-----সূরাহ আশশুআরা(অধ্যায়-২৬),আয়াত-২২৪-২২৭
এ আয়াতগুলির একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। যেখানে মক্কার প্যাগান কবিদের ইতিকথা আছে, মানবতার ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধাচারী কবিদের অপপ্রচারের ইতিহাস আছে। কিন্তু তাতে কবি সমাজকে, কবিতাকে 'না' বলা নেই।
এ আয়াতগুলির একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে। যেখানে মক্কার প্যাগান কবিদের ইতিকথা আছে, মানবতার ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধাচারী কবিদের অপপ্রচারের ইতিহাস আছে। কিন্তু তাতে কবি সমাজকে, কবিতাকে 'না' বলা নেই।
২) কবিতা, অভিনয় এগুলি সৃজনশীল শিল্প মাধ্যম। মানবতার পথে যেমন শিল্পকে ব্যবহার করা
যায়, তেমনি ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, অন্যায় পথেও শিল্পকে ব্যবহার করা যায়। যদি কবি একজন অসৎ মানুষ হন, তার চিন্তাগুলিও অসৎ হবে, তার কবিতাও হবে অসৎ, অনিষ্টকর, প্রতারণামূলক। অসৎ কবিরা বোধ ও বিবেককে অনুসরণ করে চলতে পারেন না বলে শব্দের নানা জটিল উপমার আড়ালে লুকোতে চায়। শুধু শব্দ বাক্য বিন্যাস দিয়ে কবিতার মূল্যায়ন করা যায় না। যে কবিতায় সমাজের আবেদন নেই তাকে সার্থক কবিতা বলা
উচিত কিনা সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। এমনকি কবিতা্র শ্রেণী চরিত্রও নিরূপণ করা হয়, তা প্রগতিশীল নাকি প্রতিক্রিয়াশীল, নৈতিক মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে কি হয়নি।
৩) কবিতা, অভিনয়, গান, নৃত্যকলা, যাই বলি তাকে প্রকৃত অর্থে সত্য উচ্চারণ হতে হবে। অভিনেতা যদি কোনো চরিত্রকে হৃদয়ে অনুভব না করেন, তিনি অর্থোপার্জনের জন্যে যতোই নিখুঁত অভিনয় করুন, আসলে তিনি আত্ম-প্রবঞ্চনা করছেন, তার অভিনয় প্রতারণামূলক হবে, মিথ্যাচারই হবে। আর অভিনেতা যদি কোনো চরিত্রে (যেমন হতে পারে একজন বিপ্লবীর চরিত্র বা ভিক্ষুকের চরিত্র ) অভিনয় করেন ও চরিত্রকে
সৎভাবে নিজ অন্তরে অনুভব করেন, তবেই তার অভিনয় সত্য উচ্চারণের মতো ফুটে উঠবে।
কবিতা বা অভিনয় বা গান বা নৃত্যকলা, সব ক্ষেত্রেই মানুষটিকে সৎ হতে হবে। আর একজন বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল মানুষের কবিতায় সে আবেদন, সে সম্ভাবনা রয়েছে।
কবিতা বা অভিনয় বা গান বা নৃত্যকলা, সব ক্ষেত্রেই মানুষটিকে সৎ হতে হবে। আর একজন বিশ্বাসী ও সৎকর্মশীল মানুষের কবিতায় সে আবেদন, সে সম্ভাবনা রয়েছে।
Comments
Post a Comment