বিশ্বাসের ধর্ম(বা দর্শন) বনাম অবিশ্বাসের ধর্ম(বা দর্শন)-৩ -ধর্ম কি মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয় না? -আইনুল বারী

৮৬.বিশ্বাসের ধর্ম(বা দর্শন) বনাম  অবিশ্বাসের ধর্ম(বা দর্শন)-
-ধর্ম কি মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয় না?
-আইনুল বারী
--     --                 ---     --

 (১)নাস্তিক্যবাদের ভালো কাজের পক্ষে নৈতিকতার একটি যুক্তি এই, বেহেশতের লোভে বা দোযখের ভয়ে ভালো কাজ করার প্রয়োজন নেই। ভালো কাজ করা উচিত নিঃস্বার্থভাবে। নিঃস্বার্থ ভালো কাজের মধ্যে যে আত্মতৃপ্তি বা শান্তিলাভ, তাই ভালো কাজের পুরষ্কার হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পৃথিবীতে বেহেশত ও দোযখে অবিশ্বাসী অনেক মানুষ আছে যারা ভালো কাজ করে থাকেন কোনো কিছু পাওয়ার আশা না করেই। এই চাওয়া-পাওয়াহীন ভালো কাজের পরমূহূর্তে নিজের অন্তরে যে সুন্দর অনুভূতি, যে আত্ম-তৃপ্তি ও শান্তির উদ্রেক হয় তা তুলনাহীন। আমাদের সংকীর্ণ স্বার্থবাদী সুখের চেয়ে এর গভীরতা অনেক বেশি।
নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ উপলব্ধি, যুক্তি হিসেবেও যথাযথ। যে ব্যক্তি ভালো কাজে আত্মনিয়োগ করে, যদি ভালো কাজে নিঃস্বার্থপরতা থাকে তবে তা অন্তরে প্রশান্তিদায়ক। আর যে ব্যক্তি কেবল ভোগবাদী স্বার্থপরতার তাড়ণায় ভালো কাজ করে তার অন্তর সংকীর্ণ হয়। তাহলে প্রশ্ন, ধর্ম কি মানুষকে নিঃস্বার্থ ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয় না? বেহেশত লাভের স্বার্থপর চিন্তা তাকে ভালো কাজে প্রণোদিত করে মাত্র? আর দোযখের ভয় বাধ্য করে?

 (২)কুর’আনে উল্লেখ আছে, সুরাহ দাহর (মানুষ), অধ্যায়-৭৬ এর আয়াত থেকে ১১ পর্যন্ত,
'আর তারা খাবার তুলে দেয়
এর প্রতি মোহ সত্ত্বেও
দীন-দরিদ্রকে,
এতিমদের মুখে,
বন্দীদেরকে
(অন্তকরণে বলে),
আমরা তোমাদের খাইয়েছি
শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
এজন্য তোমাদের কাছে প্রতিদান চাই না
না কোনো কৃতজ্ঞতা।
নিশ্চয়ই আমরা ভয় করি
আমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে
এক কঠিন, তিক্ত দিনের
কিনতু আল্লাহ তাদেরকে রক্ষা করবেন
সেদিনের অনিষ্ট হতে,
আর তাদের মিলিয়ে দিবেন
এক সৌন্দর্যের আলো
আর বেহেশতী আনন্দ'
পার্থিব কোনো বিনিময়ের প্রত্যাশা না করে কেউ ভালো কাজ করলে তার জন্যে রয়েছে এক সৌন্দর্যের আলো আর বেহেশতী আনন্দ এই প্রাপ্তি মানুষের মহা্ন প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক অনুগ্রহ হিসেবে দেখা উচিত, সংকীর্ণ ভোগবাদী স্বার্থপর চিন্তা দিয়ে নয়। শাস্তি ও পুরষ্কার প্রতিটি কাজের অংশ, সেটি যেভাবেই পর্যবেক্ষণ করি না কেনো । কিন্তু এর অর্থ এই নয়, মানুষ নিজের বোধ ও বিবেককে কাজে লাগাবে না। এর অর্থ নয় যে মানুষ ভালো কাজে স্বার্থপর হবে। ধর্ম আমাদের মহান হৃদয়ের মানুষ হওয়ার অনুপ্রেরণা দেয়। ধর্ম আমাদেরকে পার্থিব লোভ-লালসার ক্ষতিকারক প্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে আত্মশুদ্ধ হতে বলে। একজন ধার্মিক যখন ভালো কাজ করে তখন তার হৃদয়ের প্রশান্তি বহুগুণ বিস্তৃত হয় এই ভাবনায় যে তার কৃতকর্মে মহান প্রতিপালক সন্তুষ্ট হয়েছেন। সন্তানদের ভালো কাজের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যায় যখন তার বাবা-মা-শিক্ষক তাকে সাবাস বলে। একজন ধার্মিক লোক দেখানো ভালো কাজ করলে, লোকের ধন্যবাদ পাওয়ার লোভে ভালো কাজ করলে তিনি আর ভালো ধার্মিক থাকেন না, তার অন্তরে শান্তিও আসে না, আসে অনুশোচনা। ধার্মিকেরা বিশ্বাস করেন, ভালো কাজে আত্মত্যাগে হৃদয়ে যে বেহেশতী সুখের ছোঁয়া লাগে, তা আল্লাহর সন্তুষ্টি থেকেই আসে। আল্লাহর  সন্তুষ্টির চেয়ে বড় কী আছে ধার্মিকের জন্যে? 

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

আল্লাহ সব কিছু দেখেন, সবকিছু শোনেন, আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন সব কিছুর স্বাক্ষীঃ বিশ্বাস ও অবিশ্বাস -আইনুল বারী