ইসলাম ধর্ম কি নারী বিদ্বেষী?-১ কুর'আনের কতিপয় আয়াত-আইনুল বারী
৮৫.ইসলাম ধর্ম কি নারী বিদ্বেষী?-১
কুর'আনের কতিপয়
আয়াত
-আইনুল বারী
-আইনুল বারী
--
--- ----
আমাদের
সামজিক জীবনে নারী বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি কখনো মা, কখনো জীবন সঙ্গী , কখনো বোন, কখনো কন্যা, কখনো সাধারণ বন্ধু, কখনো একজন নারী সহকর্মী, বা একজন সাধারণ মানুষ।
ইসলাম কি তাদের প্রতি কোনো অন্যায় আচরণ বা বিদ্বেষ পোষণ করতে বলে?
এ বিষয়ে প্রথমে, বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে, কুর'আনের তাৎপর্যপূর্ণ কিছু
আয়াত অনুধাবন করা যাক -
... 'আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে।
তার দুধ ছাড়ানো দু’ বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি
যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।'-সুরাহ লুক্বমান, ৩১ঃ১৪
'আর মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করলাম;তার মা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করে ও কষ্টে
তাকে প্রসব করে।গর্ভ ধারণ ও স্তনদানে তিরিশটি মাস সেখানে সময় লাগে, ফলে পূর্ণ শক্তি পেয়ে সে যৌবনে উপনীত হয়, যখন চল্লিশে পৌঁছে, তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক!আমাকে আপনার অনুকম্পার
প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার সুযোগ দিন যা আমাকেও আমার পিতা-মাতাকে দিয়েছেন। আর যেনো আপনার নির্দেশিত সঠিক পথে চলতে পারি। আর
আমাকে ভাগ্যবান সন্তান-সন্ততি
প্রদানকরুন। সত্যিকারভাবে আমি আপনার অভিমুখী হয়েছি এবং নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি
একজন বিনীত মুসলমান।’
‘এরা সে সব মানুষ যাদের সৎকর্মসমূহ আমি গ্রহণ
করি, এবং তাদের যাবতীয় গুনাহ
আমি মাফ করে দিবো, এরাই বেহেশতবাসীর
অন্তর্ভুক্ত হবে, তাদেরকে প্রদত্ত
প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত হবে।’-সুরাহ আহক্বা-ফ (অধ্যায়)-৪৬, আয়াত-১৫-১৬
'আর তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো
ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে 'উফ!' শব্দটিও বলো না এবং
তাদেরকে রূঢ় কথা বলো না, তাদের সাথে শ্রদ্ধাভরে কথা
বলো।' -সূ্রাহ ইসরা, ১৭ঃ২৩
'তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে
পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহমত
বর্ষণ করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে
লালন-পালন
করেছেন।' -সূরাহ ইসরা, ১৭ঃ২৪
'যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সংবাদ দেয়া
হয়, তখন তাদের মুখ কালো হয়ে
যায়, আর নিজের ভেতরে অসহ্য
মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে।'
'সে তখন লজ্জায় লোক সমাজের কাছ থেকে নিজের মুখ
লুকিয়ে রাখে, কারণ দুঃসংবাদ শুনে সে
ভাবেঃ অপমান সহ্য করে (অসন্মানের সাথে) তাকে
বেঁচে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নীচে পুঁতে
ফেলবে! নিশ্চয়
তাদের বিচার বড় নিকৃষ্ট!'-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৫৮,৫৯
‘যখন জীবন্ত প্রোথিত মেয়ে জিজ্ঞাসিত হবে, সে কোন দোষে নিহত হলো?’-সুরাহ তাকবির(অধ্যায়-৮১), আয়াত ৮,৯
‘বস্তুত, আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)পুরুষ ও আত্ম-সমার্পণকারী(মুসলিম)নারী, বিশ্বাসী(ইমানদার)পুরুষ ও বিশ্বাসী(ইমানদার)নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী
নারী, ধৈর্য্যশীল পুরুষ ও
ধৈর্য্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল
নারী,রোযা পালণকারী পুরুষ ও
রোযা পালনকারী নারী, সতীত্ব রক্ষাকারী পুরুষ ও
সতীত্ব রক্ষাকারী নারী, অধিক হারে আল্লাহকে
স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক হারে আল্লাহকে স্মরণকারী নারী; আল্লাহ তাদের জন্য
প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহা পুরুষ্কার।’-সূরাহ আহযাব,(অধ্যায়-৩৩),আয়াত-৩৫
‘আর তাঁর নিদর্শন হলো এই
যেঃ তিনি তোমাদের জন্য,তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি
করলেন জীবনসঙ্গী(আযওয়াজান),যেনো তোমরা তাদের মাঝে
শান্তি খুঁজে পাও,আর তিনি তোমাদের মাঝে মায়া
ও দয়া ব্যাপ্ত করে দিলেন। নিশ্চয় চিন্তাশীলদের(অনুধ্যানকারীদের) জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ -সূরাহ রূম(অধ্যায়-৩০),আয়াত-২১
'.. যখন তোমরা তাদেরকে
মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণের জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত
প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের জায়গায় অবিশ্বাস আনলো, তার কর্ম বিফল হয়ে গেল এবং পরকালে সে
ক্ষতিগ্রস্ত হলো।'-সুরাহ আল মাইদাহ(অধ্যায়-৫),আয়াত-৫
‘আর যদি কোনো নারী তার
স্বামীর কাছ থেকে থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষা আশংকা করে, সেক্ষেত্রে তারা যদি
নিজেদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ/ন্যায়সংগত মীমাংসা করে নেয় তাতে দোষ নেই। এমন
(শান্তিপূর্ণ)মীমাংসাই শ্রেয়তর। কিন্তু মনের ভেতরে লোভ সৃষ্টি হয়ে আছে। যদি তোমরা
ভালো কাজ করো ও ধার্মিক হও, নিশ্চয় তোমরা যা কিছু করো
আল্লাহ খবর রাখেন ।’-সুরাহ নিসা(অধ্যায়-৪)আয়াত-১২৮
'তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে দিয়ে দাও এবং
তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব
হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে
তাদেরকে সচ্ছ্বল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।'-সূরাহ নূর,২৪ঃ৩২
‘আর তারা নারীদের ব্যাপারে
আপনার মতামত জানতে চায়।
বলুনঃ আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশনা দেন,
এবং কুর’আনে তোমাদেরকে ঐ সব এতিম নারীদের বিষয়ে যা যা পাঠ করে শোনানো হয়, যাদেরকে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান করো না,
অথচ বিয়ে করার বাসনা রাখো।
আর নিগৃহীত দুর্বল(/প্রতিবন্ধী) শিশুদের ব্যাপারেও,
আর তোমাদের উচিত এতিমদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা।
আর তোমরা যা কিছু ভালো কাজ করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন।’
–সূরাহ নিসা(অধ্যায়-৪),আয়াত-১২৭
বলুনঃ আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশনা দেন,
এবং কুর’আনে তোমাদেরকে ঐ সব এতিম নারীদের বিষয়ে যা যা পাঠ করে শোনানো হয়, যাদেরকে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান করো না,
অথচ বিয়ে করার বাসনা রাখো।
আর নিগৃহীত দুর্বল(/প্রতিবন্ধী) শিশুদের ব্যাপারেও,
আর তোমাদের উচিত এতিমদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা।
আর তোমরা যা কিছু ভালো কাজ করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন।’
–সূরাহ নিসা(অধ্যায়-৪),আয়াত-১২৭
ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের গোত্রীয় সমাজে নারীদের প্রতি
অত্যন্ত অবমাননাকর, একটি রীতি চালু ছিলো।
তালাক দেয়ার মতো বিবাহিত পুরুষরা তাদের স্ত্রীদেরকে 'তুমি আমার মায়ের মতো' এ কথা বলে স্ত্রীকে অবৈধ ঘোষণা করতো।
স্ত্রী বয়স্ক হলে, তার প্রতি আকর্ষণ হারালে, সন্তান দানে অক্ষম হলে, এমন আচরণ করা হতো বলে প্রতীয়মান হয়। এটি
তালাকের মতো এক ধরণের রীতি হলেও স্ত্রীদের অন্যত্র বিয়ে করার অধিকার বা সামাজিক
মর্যাদা ছিলো না। ইসলাম আবির্ভাবের পর এই রীতি বন্ধ হয়ে যায় মুসলমান সমাজে। এই অসাধ্য সাধিত হয় কুর'আনের
কয়েকটি আয়াত নাযিলের মাধ্যমে।
এ সংক্রান্তে সূরাহ মুজদালার প্রথম আয়াতে আছে একটি ঘটনার
উল্লেখ, যেখানে
অবমাননার শিকার একজন মহিলা অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন শেষ নবীর (তাঁর প্রতি শান্তি)
কাছেঃ
'তোমার কাছে যে নারী তার স্বামীর ব্যাপারে বাদানুবাদ করছে, আর আল্লাহর কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে, আল্লাহ তার কথা শুনেছেন।আল্লাহ তোমাদের দুজনের কথাই শুনেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সব শোনেন,সব দেখেন।'-সূরাহ মুজদালা(অধ্যায়-৫৮),আয়াত-১
তাফসির ও সংশ্লিষ্ট হাদিস পর্যালোচনা করে উল্লেখিত ঘটনাটি সম্পর্কে যে টুকু জানা যায় তা হলো, এক বিবাহিত বয়স্ক নারী নবীর কাছে এসে অভিযোগ করছিলেন, তার স্বামী এতোদিন তার সম্পদ ব্যবহার করেছেন, তার যৌবন উপভোগ করেছে্ন, তার গর্ভের সন্তান পেয়েছেন, কিন্তু যখন আজ তার বয়স হয়ে গেছে, যখন তিনি সন্তান ধারণে অক্ষম, তখন তাকে 'তুমি আমার মায়ের মতো, তাই তুমি অবৈধ' বলে ত্যাগ করেছে্ন।
আল্লাহ আয়াত নাযিল করলেন, 'তোমাদের মধ্যে যারা
তাদের স্ত্রীদেরকে 'মায়ের
মতো' বলে
অবৈধ করে দাও,
(কিন্তু)
তাদের স্ত্রীরা তাদের মা হতে পারে না। তাদের জন্মদাত্রীরা ছাড়া অন্য কেউ তাদের মা
নয়। বস্তুত তারা যে কথা বলছে তা বিদ্বেষ্পূর্ণ ও অসত্য। নিশ্চয়
আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।'--সূরাহ
মুজদালা(অধ্যায়-৫৮),আয়াত-২
'আর যারা তাদের স্ত্রীদেরকে (মা্যের মতো বলে) অবৈধ করে দিয়েছে, তারপর নিজেদের উচ্চারিত কথা প্রত্যাহার করতে চায়, তবে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একজন দাসকে মুক্তি দাও; প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে এমনই তোমাদেরকে করতে হবে; আর তোমরা যা করো, আল্লাহ সবই অবগত।'
-সূরাহ
মুজদালা(অধ্যায়-৫৮),আয়াত-৩
'তবে যার এ সামর্থ্য নেই, সে একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে টানা দু' মাস সিয়াম পালন করবে; আর যে এতেও অক্ষম হয় সে ষাট জন দরিদ্র মানুষকে আহার দান করাবে। ...'-সূরাহ মুজদালা(অধ্যায়-৫৮),আয়াত-৪
‘আর যারা কোনো নির্দোষ নারীকে তার সতীত্ব নিয়ে
অপবাদ দেয়, আর চার জন সাক্ষী উপস্থিত
করতে না পারে, তাদের আশিটি বেত্রাঘাত করো, আর কখনও তাদের জবানবন্দী
সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করো না। নিশ্চয় তারা আল্লাহর অবাধ্য।’-সূরাহ, অধ্যায়-২৪, আয়াত-৪
'ও বিশ্বাসীগণ! তোমরা পুরুষরা একে অন্যকে উপহাস করো না, কেননা সে হয়তো উপহাসকারীর চেয়ে উত্তম হতে পারে; নারীরাও তোমাদের মধ্যে একে অন্যকে উপহাস করো না, এমন হতে পারে সে উপহাসকারীর চেয়েও উত্তম। তোমরা একে অন্যের প্রতি দোষারোপ করো না, মন্দ নামে ডেকো না। বিশ্বাস আনার পর কাউকে মন্দ নামে ডাকা নিচুতা (অপরাধমূলক)। আর যারা এমন কাজের অনুশোচনা না করে সে অপরাধী।'-সুরাহ আল-হুজুরাত,৪৯ঃ১
'আর
বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে অপরের সাহায়ক বন্ধু। তারা ভালো কাজের উপদেশ
দেয় এবং মন্দ কাজে নিষেধ করে। নিয়মিত প্রার্থণা(সালাত) করে, যাকাত
প্রদান (আত্ম-শুদ্ধির জন্য দান) করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মেনে চলে।
তাদেরকেই,
আল্লাহ
তাদের উপর করুণা বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞানী।'-সূরাহ
তওবা,
অধ্যায়-৯, আয়াত-৭১
এই আয়াতগুলিতে নারী মা হিসেবে,
কন্যা
সন্তান হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে এবং পারিবারিক বা রক্ত সম্পর্কবিহীন নারীর সম্মান ও অধিকার বিষয়ে অনেকটাই স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়,
তবে ইসলামে নারীর অবস্থানকে পুরোপুরি বুঝতে আরও বিস্তৃত ব্যাখ্যার প্রয়োজন রয়েছে। কিছু অপব্যাখ্যাত আয়াতেরও সঠিক ব্যাখ্যা জানাও প্রয়োজন। প্রত্যাশা রইলো পরবর্তীতে সে চেষ্টা করবো, আল্লাহ আমাকে সে তৌফিক দিন।
(অসমাপ্ত)
(অসমাপ্ত)
Comments
Post a Comment