হাদিসের সংশয়ঃ১ -আইনুল বারী

৫৯.হাদিসের সংশয়ঃ১
-আইনুল বারী
--   --   --   ---
ইসলামের নামে তৈরি হয়েছে এক স্ব-বিরোধপূর্ণ মোল্লাতন্ত্র, যা মুসলিম সমাজে সাধারণ মানুষের চিন্তা-ভাবনার উপর, নিজেদের মতো উপলব্ধি ও মতামত দেয়ার উপর, ট্যাবু আরোপ করে রেখেছে। যার ভীতস্বরূপ অজস্র পরষ্পরবিরোধী হাদিস-সুন্নাহ, যেগুলি চাইনিজ  হুইসপারের ঐতিহাসিক  মীথ হয়ে আছে, যে সম্পর্কে আমাদের কোন সুনিশ্চিত জ্ঞান নেই, বস্তুনিষ্ঠ গবেষণাও তেমন কিছু হয়নি।  ফলে যা হবার তাই হচ্ছে পরষ্পর বিরোধী হাদিসের কারণে একদিকে ধর্মের বিকৃত ব্যখ্যা, অন্য দিকে ধর্ম-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। একাডেমিক আলোচনার পরিবর্তে অবিরত কুট-তর্ক চলছে, কোনো পক্ষেই খুব ভালো কিছু হচ্ছে না
(২) ইসলামী যুগের প্রথম পর্বেই বিভিন্ন পর্বে অজস্র জাল হাদিস ছড়িয়ে পড়েছিলো। দু'ভাবেই ছড়িয়েছিলো, অপপ্রচার হিসেবে প্রচারের নামেও।ছড়িয়েছিলো জালিয়াতদের মাধ্যমে,ছড়িয়েছিলো তথাকথিত আলেম সমাজের মাধ্যমেও। বিগত কয়েক শতকের খৃষ্টান পাদ্রী,এভাঞ্জেলিক, ওরিয়েন্টেলিস্টদের গবেষণাতেও উদ্দেশ্যমূলক অথবা অনিচ্ছাকৃত সত্যের সাথে অতিরঞ্জন অনুমান -বিদ্বেষ-বিভ্রান্তিও যোগ হয়েছে।পাবলিক উইকিপিডিয়া সে সব থেকেই নিয়েছে, একাডেমিক অর্থে কিছু ভালো, অনেকটাই খারাপ আবর্জনার স্তুপের মতো। বিভিন্ন গবেষণায় আজকাল সব বেরিয়ে আসছে।

(৩) হাদিসের রকম বুঝতে একটু কমনসেন্স প্রয়োগ করে দেখা যাক, হাদিস বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেয়ার জন্য কতোখানি নির্ভরযোগ্য। একজন সাহাবী আবু হুরাইরা, তিনি ৫৩৭৪টি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

অথচ তিনি নবীর (তাঁর প্রতি শান্তি) সাথে ছিলেন মাত্র বছর দু' তিনেকের মতো এবং বেশির ভাগ হাদিসের সাক্ষী তিনি নিজেই। আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদিসগুলিকে বলা হয় একক সাক্ষীর হাদিস। অনেক হাদিস নবীর ও পরিবারের একান্ত ব্যাক্তিগত জীবন সম্পর্কিত ও মানহানিকর, যদিও সহিহ হাদিস হিসেবে প্রসিদ্ধ।

অন্য দিকে, আবু বকর সিদ্দিক ছিলেন নবীর সব চেয়ে কাছের,বিশ্বস্ত,বন্ধু প্রতিম প্রিয় সাহাবী।তিনি নবীর সাহচার্যে ছিলেন ২৩ বছরের মতো। তিনি তাঁর সততার জন্য সত্যবাদী উপাধীও পেয়েছিলেন। তাঁর দীর্ঘ ২৩ বছরের নবীকে ছায়ার মতো অনুসরণ করা জীবন থেকে বর্ণনা করেছেন মাত্র ১৪২ টি হাদিস।

আবু হুরাইরা ২/৩ বছরে (অনু) অর্থাৎ ৭৩০/১০৯৫ দিনে কীভাবে নবীর কাছ থেকে ৫৩৭৪টি হাদিস পেলেন? নিত্য নতুন কথা! প্রতি দিন ৫/৭ এর অধিক হাদিস! যা তিনি নবীর মুখ থেকে শুনেছেন! এর মধ্যে অনেক হাদিস বেশ দীর্ঘও, সব মনেও রেখেছেন! হাদিস যদি নবীর কথা ও কাজ হিসেবে অবশ্য পালনীয় হয় তবে তাতো একক সাক্ষী হিসেবে থাকার কথা নয়, সকল বা অধিকাংশ সাহাবীরাও ঐ সমস্ত হাদিস নবীর কাছ থেকে জেনে থাকার ও মেনে চলার কথা। অনেক হাদিস আছে যা পরকালের কথা, দৈব জ্ঞানের কথা, তাই যদি হবে তবে সেগুলি কেনো কুর'আনের অন্তর্ভুক্ত হয় নি?

ইমাম বুখারী একজন প্রধান হাদিস সংগ্রহক ছিলেন। যিনি ৬,০০,০০০ হাদিস থেকে নির্বাচন করেন মাত্র ৭,২৭৫টি হাদিস। ইমাম মুসলিম তাঁর সংগ্রহের ৩ লাখ হাদিস থেকে বেছে নেন মাত্র ৯,২০০টি হাদিস। আবু দাউদ ৫ লাখ হাদিসের মধ্যে মাত্র ৪,৮০০টি। যেখানে ২০০ হিজরি পর্যন্ত অস্তিত্বশীল অনু. ৪,০৮,৩২৪টি হাদিস জাল হিসেবে বলে গন্য হয়, যা ৬২০ জন জালিয়াতের মাধ্যমে ছড়িয়েছিলো বলে মনে করা হয়।

কমন সেন্স বলে, হাদিস ব্যাপারটাই বেশ খটকা লাগা ব্যাপার, ঐতিহাসিক সত্য জানতে অনেকটাই তলিয়ে দেখতে হবে। আমি হাদিসের গবেষক নই, আমার তথ্যের উৎস ইন্টারনেটে উন্মুক্ত জ্ঞানভান্ডার, আর কিছু হাতের কাছে পাওয়া গবেষণাধর্মী বই যা পড়তে পেরেছি।

(৪) অস্বীকার করার উপায় নেই যে  হাদিস-সুন্নাহগুলির সাথে মিশে আছে ইসলামের ইতিহাসের জরুরি সাক্ষ্য-উপাত্ত, তবে কেবল সঠিক গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে তা ছেঁকে তুলতে হবেআসল তথ্যকে।শুধু এটুকু যথেষ্ট নয়এগুলি 'সহিহ হাদিস বলে সন্দেহাতীত মেনে নেয়া।অনেক সহিহ হাদিস কুর'আনের বক্তব্যের সাথে একদম উল্টো ধরণের নৈতিকতা। আরব প্রথা-রীতি-চালচলনের অনেক কিছুও মিশে গেছে ধর্মের অবশ্য করণীয় হিসেবে।ধর্মান্ধতা-গোঁড়ামি কুর'আনের শিক্ষাকে না বুঝে  শতকের ইসলামকেই হুবহু বসিয়ে দিয়ে চায় আজকের যুগে। ইসলামের বিশ্বাসে জায়গা দখল করে নির্বোধ কিছু রিচুয়াল,উচ্চারণ আর আনুষ্ঠানিকতা।অথচ আল্লাহ বলেছেন কুর''আন চিন্তাশীলদের জন্য


Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী