‘ক্ষমতা’ বিষয়ক তত্ত্বালোচনাঃ আধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও ইসলামের চিরকালীন প্রজ্ঞা। -আইনুল
৩৯.‘ক্ষমতা’ বিষয়ক তত্ত্বালোচনাঃ আধুনিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও
ইসলামের চিরকালীন প্রজ্ঞা।
-আইনুল বারী
-- --- --
চলমান
বিশ্বব্যবস্থা যে ভোগবাদী ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী জীবন দর্শন সৃষ্টি করেছে তার
একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হচ্ছে ‘ক্ষমতা’।এই ক্ষমতাকে
কেন্দ্র করে সম্প্রসারিত ও আবর্তিত হচ্ছে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যস্থার নানা দিক।কিন্তু
এর বিপরীতে ইসলাম শেখায়ঃ মানুষ প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাহীন, আপাত ক্ষমতা হচ্ছে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব মাত্র।
এক।
পুঁজিবাদী
ভোগবাদী বাজার অর্থনীতির বিশ্ব ব্যবস্থা ভোগের অজস্র উপকরণ,সে সব লাভের উপযোগী রুচি ও লোভ সৃষ্টির পাশাপাশি তা রক্ষায় বৈশ্বিক ক্ষমতার
একটি কেন্দ্র বিনির্মাণ করে।যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত করা যায় সারা বিশ্বের সাধারণ নাগরিকদের সন্দেহজনক গতিবিধি। ক্ষমতার এ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার সাধারণ
মানুষের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য।পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এটাই পরিণতিঃঅসীম
আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সম্পদ অর্জন, রাষ্ট্রীয়ভাবে
তার অসম বন্টন, স্বার্থপর ভোগ,অহংকারী আত্মকেন্দ্রিক জীবনবোধ,
সামাজি‘ক্ষমতা’ বিষয়ক তত্ত্বালোচনাঃ আধুনিক ব্যক্তিস্বাক
সম্পর্কে সন্দেহ ও পরষ্পর বিচ্ছিন্নতা ও অন্যের প্রতি প্রভুত্বসূলভ নিষ্ঠুর ও
উপেক্ষার আচরণ।পুঁজিবাদী জীবন ব্যবস্থায় নিরংকুশ ‘অহম’ বা ‘আত্ম-কেন্দ্রিকতা’ ও 'প্রভুত্ব'
বা 'ক্ষমতা' দুটি অনিবার্য বিষয়। এই আত্মকেন্দ্রিকতার
সাথে ক্ষমতার যোগসূত্র রয়েছে।এই ক্ষমতা সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন
মানুষের মধ্যে চর্চিত হয় মর্যাদার উচ্চ-নীচ ভেদে। ফলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক হয়
স্বার্থপরতার যুক্তি ও মনস্তত্ত্বে। বেশি ক্ষমতাশালী মানুষ অন্যদের তার অধীনস্ত মনে
করে, তার দ্বারা প্রশংসিত হতে চায়, তাকে কৃতজ্ঞ হিসেবে পেতে চায়।মানুষ মনে করে ক্ষমতা তারই একান্ত। এমন
জীবনবোধ ও জীবনব্যবস্থা যতো দিন সক্রিয় থাকবে ততোদিন কি আদৌ সম্ভব ঐক্য ও
ভালোবাসার বিশ্ব মানবতা? নাকি সম্ভব উন্নত নৈতিক জীবন লাভ ও বিশ্ব
শান্তি?
দুই।
ক্ষমতা
বিষয়ে ইসলামিক প্রজ্ঞা হলো, মানুষকে বাস্তবিক অর্থেই ক্ষমতাহীন দেখা।
মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা আপাত,
তা আদৌ তার
নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নয়, ক্ষমতা ও প্রভুত্ব একমাত্র মানুষের
প্রতিপালকের, মানুষের সৃষ্টিকর্তার। মানুষ যাকে ক্ষমতা
মনে করে তা হলো তার উপর অর্পিত দায়িত্ব মাত্র।যতো বেশি ক্ষমতার বিস্তার ততো বেশি
দায়িত্বের চাপ বৃদ্ধি। পুঁজিবাদী জীবনবোধে যেখানে ক্ষমতার স্বাদকে একান্ত সুখ বলে
মনে হয় তাই ইসলামের জীবনবোধে দায়িত্বের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে।এটাই দুই
জীবনবোধের মূল পার্থক্য।একজন নিবেদিত মুসলমান তার সামাজিক অবস্থানকে ক্ষমতা ও
আত্ম-অহংকারের নিক্তিতে মাপে না।সে উপকারের জন্য অন্যের দ্বারা প্রশংসিত হতে চায়
না, নিজেকে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারকারী
প্রভু মনে করে না। ইসলাম পরষ্পরকে নিজের মতোই আরেকজন মানুষ হিসেবে সম্মান করতে
শেখায়। এই পারষ্পরিক সম্মান সমাজে ঘৃণা ও উপেক্ষার বদলে ভালোবাসা ও সহানুভূতির
সম্পর্ক স্থাপন করে।যদি কখনো সম্ভব হয় তবে এভাবেই বিশ্ব মানবতার ঐক্য ও বিশ্ব
শান্তি অর্জন সম্ভব।অন্য কোনোভাবে নয়। মানব সভ্যতার চূড়ান্ত গন্তব্য সেদিকেই।
Comments
Post a Comment