বিশ্বাসের দর্শন বনাম অবিশ্বাসের দর্শন-২ ধর্মের সত্য গ্রহণে অবিশ্বাসীর মনস্তাত্তিক বাধা
৮০.বিশ্বাসের দর্শন বনাম অবিশ্বাসের দর্শন
-২
-ধর্মের
সত্য গ্রহণে অবিশ্বাসীর মনস্তাত্তিক বাধা
-- --- --
ধর্মের সত্য গ্রহণে অবিশ্বাসীর মনস্তাত্তিক বাধা কোথায়?
যারা বিশ্বাসী তারা সৃষ্টিকূলের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালককে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন নবী-রাসুলদের, তাঁদের প্রতি নাযিলকৃত ঐশীগ্রন্থে এবং পরকালের বিচার দিনে। সেজন্যেই তারা বিশ্বাসী। বিশ্বাসীদের এই বিশ্বাস সবার ক্ষেত্রে শুধু বই পড়ে অর্জন করা সম্ভব হয় না, জ্ঞান শুধু যুক্তির নিয়মে আসে না, স্বজ্ঞামূলক ও সাক্ষাৎ জ্ঞানও মানুষ লাভ করে। বিশ্বাসীরা তাই যখন নবীদের(তাঁদের প্রতি শান্তি) জীবনের ঘটনাগুলি থেকে জ্ঞান আরোহণের চেষ্টা করেন, যখন ঐশীগ্রন্থগুলির মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা করেন তখন বিশ্বাসের মনস্তত্ত্ব তাকে সাহায্য করে যথার্থ ব্যাখ্যাটিকে খুঁজে পেতে।
যারা বিশ্বাসী তারা সৃষ্টিকূলের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালককে বিশ্বাস করেন। বিশ্বাস করেন নবী-রাসুলদের, তাঁদের প্রতি নাযিলকৃত ঐশীগ্রন্থে এবং পরকালের বিচার দিনে। সেজন্যেই তারা বিশ্বাসী। বিশ্বাসীদের এই বিশ্বাস সবার ক্ষেত্রে শুধু বই পড়ে অর্জন করা সম্ভব হয় না, জ্ঞান শুধু যুক্তির নিয়মে আসে না, স্বজ্ঞামূলক ও সাক্ষাৎ জ্ঞানও মানুষ লাভ করে। বিশ্বাসীরা তাই যখন নবীদের(তাঁদের প্রতি শান্তি) জীবনের ঘটনাগুলি থেকে জ্ঞান আরোহণের চেষ্টা করেন, যখন ঐশীগ্রন্থগুলির মর্মার্থ বুঝতে চেষ্টা করেন তখন বিশ্বাসের মনস্তত্ত্ব তাকে সাহায্য করে যথার্থ ব্যাখ্যাটিকে খুঁজে পেতে।
অন্য
দিকে অবিশ্বাসীরা বিশ্বাসীদের ধর্মীয় অধ্যাত্মবাদী ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেন। কেননা তারা বিশ্বাস
করেন না তারা সৃষ্টিকূলের সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালককে। বিশ্বাস করেন না
নবী-রাসুলদের, তাঁদের প্রতি নাযিলকৃত ঐশীগ্রন্থে এবং পরকালের বিচার দিনে। তারা মূলত বস্তুবাদী চিন্তা দ্বারা পরিবেষ্টিত, যেখানে ঈশ্বরকে হতে হবে এমন এক পদার্থ যার অস্তিত্বের থাকবে একটি ভারকেন্দ্র, ওজন, ঘূর্ণন, দিক, যাকে খুঁজে পেতে হবে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের চোখের নিচে অথবা মহাকাশে দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অনুধ্যানে। সেজন্যেই
তারা অবিশ্বাসী।
তাই,
তারা অবিশ্বাসী বলেই, সরল যুক্তিতে নবী-রাসুলদের(তাঁদের প্রতি শান্তি)কথা বিশ্বাস করেন না। তারা বিশ্বাস করেনঃ হয়তো নবী-রাসুলরা মানসিকভাবে
অসুস্থ, হেলুসিনেশনে ভুগছিলেন,
অথবা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী কোনো মিথ্যাবাদী-প্রতারক ছিলেন।
অবিশ্বাসীদের প্রবল মতটি ছিলো, নবী-রাসুলেরা মিথ্যাবাদী ছিলেন। তাঁরা শুধু মিথ্যাবাদী-প্রতারণার কর্মকান্ডের পেছনে নিশ্চয় অসৎ
কোনো দুরভিসন্ধি ছিলো। তারা মনে করেন নবী-রাসুলগণ নিজেরাই ঐশী বাণী বানিয়ে স্বার্থ
সিদ্ধি লাভ করে গেছেন। ফলে অবিশ্বাসীরা তাদের সকল কর্মকান্ডকেই অত্যন্ত খারাপ হিসেবে মূল্যায়ন করে থাকেন, এমন তাদের ভালো কাজগুলির মধ্যেও খারাপ উদ্দেশ্য খুঁজে থাকেন। দুঃখজনক হলেও সত্য এভাবে চিন্তা-ভাবনা করা অবিশ্বাসীদের জন্যে একান্ত
অপরিহার্য, কেননা তা না হলে তাদের পক্ষে অবিশ্বাসী থাকার বৈধতা থাকে না।
শেষ
নবী মোহাম্মদের(তাঁর প্রতি শান্তি) জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি্র সাথে অবতীর্ণ কুর’আনের
আয়াতগুলির একটি সম্পর্ক রয়েছে, যদিও কুর’আনের বাণী আজকের দিনের জন্যেও
দিক-নির্দেশনা হিসেবে রয়ে গেছে। নবীর জীবনের ঘটনাগুলি, তাঁর রাষ্ট্রীয়, সামাজিক,
পারিবারিক সম্পর্কের ঘণ্টনাগুলি তাই একান্তই তাঁর নিজস্ব নয়। তাঁর নিজস্ব জীবনের
পাশাপাশি মানবজাতির জন্যেও সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার অনুপ্রেরণ রয়েছে। কুর’আনের
আলোকে নবী-রাসুলগণ নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ও যুগের সমস্যার
সমাধান করে গেছেন। বিশ্বাসীরা যখন তা মনে রাখেন তখন তাদের কাছে নবী-রাসুলের কথা
গভীর উপলব্ধির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু অবিশ্বাসীরা নবী-রাসুলদের জীবনে ঘটনাগুলিওকে সন্দেহের চোখে দেখেন। তারা ব্যক্তি
মানুষের খেয়াল-খুশি হিসেবে দেখেন, যেখানে ব্যক্তি মানুষটি ভন্ড প্রতারক, কাজেই
তাদের সকম কর্মকান্ডই লোভ-লালসা-নিচুতা দিয়ে ঠাসা। অবিশ্বাসীর অস্বীকারের এই দৃষ্টিভংগি ও মনসত্ত্ব তৈরি হয় তার চিন্তা-ধারার কারণে, যা ছাঁচের মতো পূর্ব-প্রকল্পিত থাকে মস্তিষ্কে।
নিচে কুর'আনের কয়েকটি আয়াত তুলে ধরা হলো, যেখানে বিশ্বাসির মনস্তত্ত্ব শব্দ ও কথার অর্থকে পাল্টে দেয়
নেতিবাচক ভাবেঃ
'আহলে-কিতাব ও মুশরেকদের মধ্যে যারা কাফের, তারা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম।'-৯৮ঃ৬
‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সকল জীবের মধ্যে তারাই নিকৃষ্টতম যারা অকৃতজ্ঞ-অস্বীকারকারী,যারা বিশ্বাস আনবে না।’- সূরাহ আনফাল(অধ্যায়-৮),আয়াত-৫৫
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তারাই নিকৃষ্ট জীব, যারা বধির ও মূ্ক, যারা অনুধাবন করে না।’(সুরাহ আন’ফাল(অধ্যায়-৮), আয়াত-২২
‘অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের(পৌত্তলিক প্যাগানদের) হত্যা করো যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী করো এবং অবরোধ করো। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাকো। কিন্তু যদি তারা তওবা(অনুশোচনা)করে, সালাত আদায় করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’
-যেহেতু অবিশ্বাসী বিশ্বাস করেন এই আয়াতগুলি আল্লাহর কথা নয়, বরং তা একজন প্রতারক মানুষের কথা, তাই এই আয়াতগুলির অর্থ করতে গিয়ে তার কাছে মনে হতেই হবে এর মাধ্যমে একজন প্রতিশোধপরায়ণ মানুষের বিদ্বেষ ও আক্রোশ প্রকাশ পেয়েছে। অবিশ্বাসীর এই মনস্তাত্ত্বিক বাধা তাকে এগুতে দেয় না, সরিয়ে রাখে ধর্মের সত্য থেকে।
Comments
Post a Comment