‘দান’ বিষয়ে কুর’আনের কতিপয় আয়াত -আইনুল

১৯.দানবিষয়ে কুরআনের কতিপয় আয়াত                                               -আইনুল বারী                                                                                ---        ------         ---
যে ব্যয় করা হয় আল্লাহর নির্দেশিত পথে, যা করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, মানব কল্যাণে, আত্মশুদ্ধির জন্য, ধার্মিকতার শর্ত পুরণে, তেমন দান আল্লাহর কাছে অনেক আদরণীয় , তা এবাদতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এই দান কেমন হবে, কীভাবে সম্পন্ন হবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ কীভাবে সম্ভব, সে সম্পর্কে আমাদের অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। তা বুঝতে নিচের আয়াতগুলি প্রনিধানযোগ্যঃ-

যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর (নির্দেশিত) পথে ব্যয় করে, তাদের তুলনা একটি শস্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়, প্রতিটি শীষে থাকে একশটি করে শস্যদানা; আল্লাহ যার প্রতি ইচ্ছা করেন তাকে বহুগুণ প্রবৃদ্ধি দান করেন; আল্লাহ অনন্ত প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’- সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬১

যারা আল্লহর (নির্দেশিত)পথে ধনসম্পত্তি ব্যয় করে আর এরপর দানের কথা প্রচার করে না ও কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার রয়েছে তাদের পালনকর্তার কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’-সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬২

নম্র কথার মাধ্যমে ক্ষমাপরায়নতা অবলম্বন করা ঐ দানের চেয়ে উত্তম যার পরে কষ্ট দেয়া হয়।; আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।’ -সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৩

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা দানের কথা প্রকাশ করে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানকে ঐ ব্যক্তির ন্যায় নষ্ট করো না, যে তার ধন-সম্পদ শুধু লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে, এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না; তার দৃষ্টান্ত হলো একটি শিলাখন্ডের মতো, যার উপর কিছু মাটির আস্তরণ পড়েছিলো; এরপর প্রবল বর্ষণ হলো, একে ধুয়ে সম্পূর্ণ সাফ করে দিলো; তাদের উপার্জন তাদের কোনো কাজে এলো না; আর আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদেরকে পথ দেখান না।’-সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৪

আর যারা দান করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়, আর তাদের অন্তরকে সুদৃঢ় করার জন্য,
তাদের দৃষ্টান্ত হলো, কোনো টিলায় অবস্থিত একটি বাগানের মতো, যেখানে মুষল ধারে বৃষ্টি হলে দ্বিগুণ ফল উৎপন্ন হয়, আর প্রবল বর্ষণ না হলেও হালকা ঝিরঝির বৃষ্টিই যথেষ্ট; আর তোমরা যাই করো আল্লাহ তা দেখেন।’ -সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৫

তোমাদের মধ্যে কেউ কি চাইবে তার এমন একটি বাগান হবে, খেজুর ও আঙ্গুরের,যার নিচ দিয়ে স্রোতধারা বয়ে চলে, তার জন্য সেখানে থাকবে সব ধরণের ফল-মূল; আর যখন সে বার্ধক্যে পৌঁছুবে, আর তার সন্তানরা থাকবে দুর্বল; আর এমনবস্থায় এক আগুনঝরা ঘূর্ণিবাতাসের আঘাতে তা পুড়িয়ে খাক হয়ে যাবে?এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন,যেনো তোমরা অনুধাবন করতে পারো।’-সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৬

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা অর্জন করো আর আমি তোমাদের জন্য জমিন থেকে উৎপন্ন করি, তা থেকে ভালো জিনিস ব্যয় করো, আর তা থেকে খারাপ জিনিস বেছে দান করতে যেও না, যখন চোখ বন্ধ না করে তোমরাই তা নিজেদের জন্য গ্রহণ করবে না,আর জেনে রেখো আল্লাহ অভাব মুক্ত, প্রশংসিত।’ -সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৭

শয়তান তোমাদের গরীবীর ভয় দেখায় আর অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা ও করুণার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়,মহা জ্ঞানী।’ -সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৬৮

তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তা ভালো, আর যদি তা গোপনে করো ও অভাবগ্রস্তদেরকে দাও, তা আরও ভালো, এতে(দানের কারণে)তোমাদের কিছু পাপমোচন হবে; আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা জানেন।’ -সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৭১

তাদেরকে সৎপথে আনার দায়িত্ব আপনার নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালনা করেন;
আর যা কিছু ভালো তোমরা ব্যয় করো সে তো নিজেদের কল্যাণের জন্যই করো, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করো না;
কল্যাণমূলক যা কিছু তোমরা ব্যয় করো তার প্রতিদান পুরোপুরি দেয়া হবে, আর তোমাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।’ -সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৭২

সাহায্য-দান ঐ সমস্ত অভাবী মানুষের জন্য, যারা আল্লাহর পথে আবব্ধ হয়ে পড়েছে, অন্যত্র বিচরণ করতে পারে না, তাদের নিবৃত্তি(সংযম) দেখে নির্বোধেরা তাদেরকে স্বচ্ছল মনে করে; তোমরা তাদেরকে তাদের লক্ষণ দিয়ে চিনতে পারবে; তারা মানুষের কাছে কাকুতি-মিনতি করে সাহায্য চায় না; আর তোমরা কল্যাণকাজে(দাতব্য) যা কিছু ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন।’ -সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৭৩

যারা নিজেদের সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, নিশ্চয় তাদের পুরষ্কার আছে তাদের প্রতিপালকের কাছে; আর তাদের কোনো ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না।’ -সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৭৪

যদি ঋণগ্রহী দুর্দশাগ্রস্ত হয়, তবে অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে সময় দাও, আর যদি দান হিসেবে মার্জনা করে দাও, তবে তা আরও উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি করো।’-সুরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-২৮০

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী