অপব্যাখ্যাত আয়াত ২ঃ২৩০- হিল্লা বিয়ে একটি ভয়ঙ্কর ভুল। আইনুল বারী

৫০.অপব্যাখ্যাত আয়াত ২ঃ২৩০- হিল্লা বিয়ে একটি ভয়ঙ্কর ভুল।
আইনুল বারী
---         --         ---
ইসলাম ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ ও পুনরায় প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর একত্রিত হওয়া নিয়ে অজ্ঞতা প্রসূত হিল্লা বিয়ে সংক্রান্ত এক ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি রয়েছে, যা মূলত ২ঃ২৩০ আয়াতের অপব্যাখ্যারই ফল।

'আর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তারপর স্ত্রী তার জন্য বৈধ নয়, যতোক্ষণ পর্যন্ত না তাকে ছাড়া অপর কাউকে বিয়ে করে, তারপর যদি দ্বিতীয় স্বামীর সাথেও তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে(তাকে তালাক দেয়), তখন তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় এক সাথে হতে কোনো পাপ নেই; যদি তারা মনে করে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা মেনে চলতে পারবে। আর এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা,যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।'
-
সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-),আয়াত-২৩০

উপরের আয়াতটি পবিত্র কুর'আনের একটি অপব্যাখ্যাত আয়াত।দ্বিতীয় স্বামীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদের পর পুনরায় প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিয়েকে প্রচলিত পরিভাষায় হিল্লা বিয়ে বলা হয়। সমালোচকরা বলেন, কতো জঘন্য ব্যাপার এই হিল্লা বিয়ে! অন্য একজনের সাথে বিয়ে করে তার সাথে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কাটিয়ে পুনরায় পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে আসার এতো জঘন্য পদ্ধতি! ব্যাপারটি কি জঘন্য কিছু, নাকি জঘন্য সমালোচকের ভুল দৃষ্টিভংগি আয়াতের ভুল অর্থ করে ভুল প্রয়োগ। পরিষ্কার করা যাক

অ্য়াতটির মর্মার্থঃ
-------------------
আয়াতটিতে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়াটি পরিষ্কার ভাবে প্রজ্ঞার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য কলহ নিরসনের একটি দীর্ঘ পর্যায়ক্রমিক বোঝাপড়ার প্রক্রিয়া আছে। সে প্রক্রিয়া পেরিয়ে এসে যখন বিবাহিত সম্পর্ক আর কোনোভাবেই টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না,কেবল তখন চূড়ান্তভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাকের সিদ্ধান্ত নিতে হয়
কিন্তু তালাকেরও একটি পর্যায়ক্রমিক ধারা আছে। প্রথম দ্বিতীয়বার তালাকেই চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটে না।তৃতীয়বার তালাকের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।তখন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আর কোনো বোঝাপড়ার সুযোগ থাকে না।তখন তারা পরষ্পরের জন্য চিরদিনের জন্য পর নারী পর পুরুষের মতো অবৈধ হয়ে যায়। এটি নির্মম বাস্তবতা
বিবাহ বিচ্ছেদের পর প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর পুনরার পরষ্পরকে বিয়ে করে নিজেদের কাছে ফিরে আসার কোনো সরল সুযোগ থাকে না। তবে তারা অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন বিবাহিত জীবন শুরু করতে পারে। অথবা কাউকে বিয়ে না করেও একাকী জীবন যাপন করতে পারে। স্বাধীনচেতা নারী পুরুষের মতোই তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিবে
কিন্তু যদি এমন হয়, বিচ্ছেদী সেই নারী অন্য কাউকে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করে, কিন্তু দ্বিতীয় স্বামীর সাথেও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে,আর তখন চাইলে আবার সে কাউকে বিয়ে করে বিবাহিত জীবন শুরু করতে পারে। তখন যদি সে নতুন স্বামী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে তার প্রথম প্রাক্তন স্বামীকেই পেতে চায়, এবং যদি তারা উভয়ই পরষ্পরকে পুনরায় চায়, তবে ইসলাম প্রাক্তন (প্রথম) স্বামী-স্ত্রীর মিলিত হবার সেই সুযোগ দিচ্ছে।তারা পুনরায় বিবাহ বন্ধনে মিলিত হতে পারবে। তাদেরকে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা পালনের ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবোধ থাকতে হবে, এবং এমন ইচ্ছাশক্তিও। যেনো বারবার একই ভুল না হয়
একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, প্রাক্তন(প্রথম) স্বামীর কাছে ফিরে যাবার জন্য প্রতারণার মাধ্যমে বা চুক্তিভিত্তিক অন্য কাউকে বিয়ে করে তাকে ছেড়ে পুনরায় প্রথম স্বামীকে বিয়ে করার অপকৌশল হিসেবে কোনোভাবেই আয়াতটিকে ব্যবহার করা উচিত নয়।সেটি স্পষ্টতই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা বড় ধরণের অন্যায় কাজ। কিন্তু মুসলিম সমাজে তথাকথিত 'শরিয়া আইনের' নামে জঘন্য ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অন্যায় কাজটিই শেখানো হচ্ছে।

-এখন আয়াতটি কি যুক্তিসঙ্গত ও মানবিক বলে মনে হচ্ছে না?

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী