কুর’আনে দাসমুক্তির কথা -আইনুল
১৭.কুর’আনে
দাসমুক্তির কথা
-আইনুল বারী
--------------------
ইসলাম ধর্ম
সম্পর্কে যারা ভালো জানেন না, যারা কুর’আনের আয়াতগুলি নিয়ে ভালো পর্যালোচনা করেন
নি তারা প্রায়শঃ সমালোচনা করে থাকেন ইসলাম ধর্ম দাসপ্রথার বিপক্ষে কেনো শক্ত
অবস্থান নেয়নি। দাসপ্রথা নিষিদ্ধ না করে বরং নবীর(তাঁর প্রতি শান্তি) যুগ থেকেই দাসপ্রথাকে অব্যাহত রেখেছিলো। অথচ তাদের দৃষ্টি
এড়িয়ে যায় কুর’আনে দাসমুক্তির পক্ষে কিছু সুস্পষ্ট আয়াত রয়েছে। আয়াতগুলি তুলে ধরা
হলো:-
(১)ইসলাম ধর্মে
দাসমুক্তিকে সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূরাহ বাক্বারাহের ১৭৭ নং আয়াতে
দাসমুক্তির জন্য সম্পদ ব্যয় করার জন্য
আল্লাহর নির্দেশ আছে।
‘সৎকর্ম শুধু এই
নয় যে, পূর্ব
কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে,
বরং বড় সৎকাজ
হল এই যে,
ঈমান (বিশ্বাস)আনবে
আল্লাহর উপর, কিয়ামত
দিবসের উপর,
ফেরেশতাদের উপর এবং
সমস্ত নবী-রসূলগণের
উপর,
আর সম্পদ ব্যয় করবে
তাঁরই ভালোবাসায় (আল্লাহর
সুন্তুষ্টির জন্য)
আত্মীয়-স্বজন,এতিম
গরীব, মুসাফির, সাহায্য
প্রার্থী, ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য।
আর যারা (নামায)প্রার্থণা প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত(গরীবের প্রাপ্য / আত্মশুদ্ধির জন্য বা ভালো
কাজে) দান করে,
এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা
সম্পাদনকারী ও অভাবে,রোগে শোকে ও
যুদ্ধের সময় ধৈর্য
ধারণকারী-
তারাই
হলো সত্যাশ্রয়ী,আর
তারাই পরহেজগার(সঠিকপথপ্রাপ্ত)।’-সূরাহ বাক্বারাহ(অধ্যায়-২),আয়াত-১৭৭
(২) কোনো
মুসলমানের দ্বারা কোনো অনিচ্ছাকৃত হত্যাকান্ড ঘটলে সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে রক্তপণ আদায়ের পাশাপাশি পাপমোচনের জন্য
দাসমুক্তির মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির সুযোগও রয়েছে।
‘আর একজন মুসলমানের ভুলক্রমে ছাড়া আরেকজন মুসলমানকে হত্যা করা উচিত নয়, আর যে একজন মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন
মুসলমান ক্রীতদাসকে মুক্ত করবে এবং তার পরিবারের কাছে রক্তপণ আদায় করবে, যদি না তারা ক্ষমা
করে দেয়(দাতব্য হিসেবে);
এখন যদি সে(নিহত
ব্যক্তি)শত্রুপক্ষের কেউ হয়, আর বিশ্বাসী হয়, তবে একজন বিশ্বাসী (মুসলমান)ক্রীতদাসকে মুক্ত করবে;
আর যদি তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার
স্বজনদেরকে এবং অবশ্যই একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে;
তথাপি কেউ যদি এভাবে না
পারে তবে সে টানা দুই মাস রোজা পালন করবে, অনুশোনার মাধ্যমে আল্লাহর কৃপা লাভের
জন্য;
আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ -সূরাহ নিসা(অধ্যায়-৪),আয়াত-৯২
(৩)দাসমুক্তিকে
দৃঢ় শপথভংগের প্রায়শ্চিত্তের সাথে একীভূত করে আল্লাহ অপরাধীর দায়মুক্তির পথ করে
দিয়েছেন।
‘আল্লাহ
তোমাদের ধরবেন না, তোমাদের
অযথা শপথের জন্য, তোমাদের
ধরবেন, তোমাদের দৃঢ়
শপথের জন্য।
এর প্রায়শ্চিত্ত হলো
দশজন অনাহারী ব্যক্তিকে
মধ্যম আহার দান, যা
তোমরা পরিবারে খেয়ে
থাকো;
বা তাদেরকে পরিধেয়
বস্ত্র দান;
অথবা এক দাস মুক্তি।
কিন্তু যে এতে
অসমর্থ হবে তার
জন্য তিন দিনের
সংযম ও অনাহারে
থাকা (রোজা রাখা)।
এটা প্রায়শ্চিত্য তোমাদের
শপথের, যখন শপথ
করবে; আর তোমরা
নিজেদের শপথ রক্ষা
করো।
এভাবে আল্লাহ তোমাদের
জন্য স্বীয় আয়াত
বর্ণনা করেন যেনো
তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’-সূরাহ
৫ সূরাহ মা'ইদাহ (অধ্যায়-৫),আয়াত-৮৯
(৪) দাসমুক্তিকে বিশ্বাসীর জন্য আত্মশুদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে
নির্দেশ করা হয়েছে,
‘না! এ
নগরের শপথ
আর আপনি এ
শহরের অধিবাসী আর
পিতা ও সন্তানরা
নিশ্চয় আমি মানুষকে
সৃষ্টি করেছি কঠিন
জীবন সংগ্রামের পরিবেশে
সে কি মনে
করে তার ওপর
ক্ষমতা বিস্তারকারী আর
কেউ নেই?
সে দম্ভোক্তি করেঃ ‘আমি
অনেক সম্পদ অপচয়
করেছি!’
সে কি মনে
করে কেউ তাকে
দেখেনি ?
আমি কি তার
জন্য দুটি চোখ
সৃষ্টি করি নি?
একটা জিহবা আর
দুটি ঠোঁট?
আর তাকে দেখাই
নি নগরের দুই
পথ?
কিন্তু এখনো সে
খাড়া পথ বেয়ে
হাঁটে নি
আর কী ভাবে
তুমি বুঝবে ঐ
খাড়া পথ কেমন
তা হলো, দাসকে বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা
অথবা মঙ্গার দিনে
খাবার তুলে দেয়া
আত্মীয় সম্পর্কের এতিমের
মুখে
অথবা ধূলি মলিন
কোনো দরিদ্রকে
তারপর সে বিশ্বাসীদের
দলভুক্ত হয়
এবং একে অন্যকে
উপদেশ দেয় ধৈর্য
ধারণের
আর উপদেশ দেয়
দয়া ও মহানুভবতার
জন্য
এরা হলো ডানপন্থী
আর
যারা আমার নিদর্শনকে
অবিশ্বাস করে,
তারা বামপন্থী তাদেরকে
ঘিরে থাকবে আগুন
।’
-সুরাহ বালাদ (নগর),আয়াত-১-২০
(৫)দাসমুক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি দাতব্য কাজ তথা সামাজিক কল্যাণ কাজের
অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
‘সদকা(দাতব্য)শুধু
তাদের হক
যারা গরীব,
নিঃস্ব, যারা
সংশ্লিষ্ট কর্মচারী,যাদের
মন জয়ের
প্রয়োজন, দাস
মুক্তির জন্য,
ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্তির
জন্য, আল্লাহর
পথে সংগ্রামরতদের
ও মুসাফিরদের
জন্য; এটাই
আল্লাহর বিধান;
আল্লাহ সর্বজ্ঞ,
জ্ঞানী।’-সুরাহ
তওবা, আয়াত-৬০
(৬) দাসদের সামাজিক অধিকার ও দাসমুক্ত হতে দাসদের অধিকার ও তার আইনগত
স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে,
'তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত,
তাদের বিবাহ দিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন,
তাদেরও। তারা যদি
নিঃস্ব হয়, তবে
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছ্বল করে
দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়,
সর্বজ্ঞ।'
‘... আর তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের
মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য লিখিত চুক্তি চাইলে, তাদের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করো, যদি জানো তাদের মধ্যে কল্যাণ
আছে, আর আল্লাহ্
তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তাদেরকে দান করো।’-সূরাহ আন-নূর(অধ্যায়-২৪),আয়াত-৩২, ৩৩
Comments
Post a Comment