কুর'আনের শিক্ষায় যুদ্ধ কীভাবে অনাকাংখিত? -আইনুল
৩৩.কুর'আনের শিক্ষায় যুদ্ধ কীভাবে অনাকাংখিত?
-আইনুল বারী
-- --- ---
কুর'আনের মাধ্যমে আল্লাহ যে জীবন বিধান মানুষকে দিয়েছেন তার একটি বাস্তব প্রয়োগ
নবী মোহাম্মাদের(তাঁর প্রতি শান্তি) সময়ে নবী নিজেই তা দেখিয়েছিলেন। তারপর কেয়ামত
পর্যন্ত সভ্যতার সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন যুগ সমস্যার সমাধানগুলি কুর'আন থেকে জ্ঞানী মানুষদেরকেই খুঁজে নিতে হবে। নবীর যুগের সমাধান এখন হুবহু প্রয়োগ
করতে গেলে অন্ধ গোঁড়ামি ও নানা জটিলতা্র সৃষ্টি হবে।
২) কুর'আনে এজন্য ক্ষেত্র বিশেষে একই ধরণের সমস্যার বিকল্প সমাধান রয়েছে। মানব
সভ্যতা সময়ের সাথে সাথে এক চূড়ান্ত মূহূর্তের মুখোমুখী হচ্ছে।এক সময় যা প্রয়োজনীয়
বাস্তবতা ছিলো আজ তার জরুরি প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আবার নতুন সমস্যার আবির্ভাব ঘটেছে।
পৃথিবীতে মানুষের যাত্রার সূচনা থেকেই(স্রষ্টার কাছে আত্ম-সমার্পণের) ধর্ম আছে।
কিন্তু ভিন্ন বাস্তবতায় নতুন সমস্যা সমাধানের জীবন বিধানও আল্লাহ দিয়েছেন।এক যুগের
মানুষ আরেক যুগের মানুষের মনস্তত্ত্বকে পুরোপুরি বুঝবে না।তার সমাধানও আগে থেকে
কেউ দিতে পারবে না। শুধু সর্বজনীন সত্যের কিছু পথ নির্দেশিকা বলে দেয়া যায়।
৩)কিন্তু
সমস্যা দেখা দিয়েছে কুর'আনের যুদ্ধ ও হত্যা বিষয়ক ও কিছু আয়াত
নিয়ে। এক দিকে জংগীবাদ যুদ্ধ ও রাষ্ট্রের কিছু নীতি ও আইন বিষয়ক আয়াতগুলি নিয়ে
রক্তপাত-নির্যাতনের খেলা খেলছে, অন্য দিকে
ইসলামের বিরুদ্ধে এই আয়াতগুলি দেখিয়েই বিরতিহীন অপপ্রচার চলছে। অথচ কে জানে এক সময়
হয়তো যুদ্ধ বলেই কিছু থাকবে না, এখনই যুদ্ধ
বিভিন্ন ধরণ ও মাত্রিকতায় ছড়িয়েছে। যুদ্ধ সবার সাথে সবার হচ্ছে না। বিশ্ব যুদ্ধের
মতো যুদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তির মধ্যে যুদ্ধ
মানে পৃথিবীর ধ্বংস।এমন যুদ্ধ হওয়া পাগলামি,
বা এর
প্রয়োজনও নেই। যদি অর্থনৈতিক শোষণই চুড়ান্ত কথা হয়,
তার জন্য
সব চেয়ে খারাপ হিসেবে স্ট্রাটেজিক আঞ্চলিক কিছু যুদ্ধই যথেষ্ট। কিন্তু অর্থনৈতিক
শোষণের অনেক প্রতারণা কৌশল আছে,সেগুলি
নিয়ে রাতদিন গবেষণাও থেমে নেই।
৪)হ্যাঁ, কুর'আনে ন্যায় যুদ্ধের অনুমোদন দেয়া আছে।
যুদ্ধ যখন যুগের বাস্তবতা তখন অন্যায়ভাবে সাম্রাজ্যবাদী বা আধিপত্যবাদী যুদ্ধকে
মোকাবিলায় প্রতিরোধ যুদ্ধের অনুমোদন আল্লাহ দিয়েছেন। মানুষ যুদ্ধ পছন্দ না করলেও এটি কখনো কখনো সমস্যা সমাধানের জন্য অনিবার্য ও
মঙ্গলজনক হয়ে দাঁড়ায়।যুদ্ধ হলো সভ্যতার সংকট,
যুদ্ধই তার
সমাধান, তবে তা আরাধোনার বিষয় নয়। মানুষ যুদ্ধের
জন্য প্রার্থণা করে না, পানির জন্য প্রার্থণা করে।মানুষ যুদ্ধের
জন্য প্রার্থণা করে না, শান্তির জন্য প্রার্থণা করে। কিন্তু যে
কোনো অন্যায় যুদ্ধকেই প্রতিরোধের প্রয়োজন ।যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তিচুক্তি ও
শান্তিপুর্ণ সমাধান খুঁজে বের করাও বিচক্ষণতার কাজ।তবে তা যেনো নীতির বিরুদ্ধে না
যায়। কুর'আনের পাতায় চোখ বুলালে আমরা দেখবো সেখানে
যুদ্ধবন্দীদের প্রতি মানবিক আচরণের দিক-নির্দেশনা রয়েছে।কুর'আনে বর্ণিত
ইসলামের যুদ্ধ-নৈতিকতা আজকের যুগের জন্য অনুসরণীয়।
৫) যুদ্ধ
বিষয়ক আয়াতগুলির অন্তর্নিহিত প্রজ্ঞাকে আমরা অনেকেই বুঝতে পারিনি। এই প্রজ্ঞার
অনুপ্রেরণা হলো এমন এক পৃথিবী গড়ে তোলা যেখানে যুদ্ধ বলে কিছু থাকবে না। যুদ্ধ
প্রবলভাবে অনাকাংখিত ইসলামে।যারা বিভিন্ন হাদিসের রেফারেন্স টেনে বলেন যুদ্ধের
মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ও প্রতিষ্ঠা করা বৈধ,
তাদেরকে
হাদিস নয়, আরেকবার কুর'আনের দিকেই চোখ ফেরাতে বলবো। যে হাদিস আমরা নবীর কথা হিসেবে নিশ্চিত প্রমাণ
করতে পারি না, যা কুর'আনের সাথে
স্ববিরোধী তা অন্ধভাবে বশ্বাস করার অর্থ হলো নবীর প্রতিই মিথ্যা আরোপ করা।
(অসমাপ্ত)
Comments
Post a Comment