স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্ক -আইনুল বারী
৪৭.স্যাটানিক
ভার্সেস বিতর্ক
-আইনুল বারী
স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্ক -- ---
(১) স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্কটির সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় প্রথম মুসলিম যুগের ঐতিহাসিক আল-ওয়াক্বিদির(৭৪৭-৮২২) সংগ্রহকৃত কাহিনীতে। সেখানে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে দাবী করা হয় সূরাহ অবতীর্ণ হওয়ার সময় শয়তান প্রতারনামূলকভাবে নবী হযরত মোহাম্মদকে(তাঁর প্রতি শান্তি) দিয়ে কয়েকটি আয়াত উচ্চারণ করিয়ে নেয়। সুরাহ নাজমের(অধ্যায়-৫৩) ১৯ থেকে ২০ অথবা ২১ নম্বর আয়াতের পর বিতর্কিত আয়াতদুটি ছিলো বলে ধরে নেয়া হয়। পরে আয়াত দু'টি কুর’আন থেকে বাদ দেয়া হয়। মক্কায় (নব্যুয়তের পঞ্চম বছরে) এ ঘটনা ঘটে।
‘তোমরা লাত ও ওজ্জাহ সম্পর্কে ভেবে দেখেছো?
আর তৃতীয় অন্যটি মানাত সম্পর্কে?
পুত্র তোমাদের জন্যে এবং কন্যা আল্লাহর জন্য?’ -৫৩ঃ১৯-২১
বিতর্কিত আয়াত দুটি হচ্ছে,
‘তারা হলো উচ্চে উড্ডীয়মান মহিমান্বিত সাড়স(ঘারানিক),তাদের মধ্যস্থতা প্রত্যাশিত।’
এরপর নবী মোহাম্মদ ও প্যাগান ধর্মীয় নেতারা একত্রে সেজদা করেন। ওয়াক্বিদির এই দাবীই স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্কের প্রধান উৎস বলা যায়।
(২) নাস্তিক পক্ষে এটি বিশ্বাস করার সুযোগ নেই যে নবী মুহাম্মাদের কাছে অবতীর্ণ কুর’আনেরর মধ্যে কয়েকটি আয়াত শয়তান কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছিলো। কেননা নাস্তিকরা নবী, ঈশ্বর, আসমানী কিতাব, শয়তানের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেন না। কাজেই স্যাটানিক ভার্সেসের অস্তিত্বের অভিযোগ তাদের কাছে অর্থিহীন হওয়ার কথা।
(৩) মুসলিম ব্যাতীত অন্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষেও স্যাটানিক ভার্সেসের অস্তিত্বের অভিযোগ মেনে নেয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। কেননা তারা নবী মোহাম্মদকে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ কুর’আন, এমনকি আল্লাহকেও স্বীকার করেন না। আর যদি শয়তান কর্তৃক অবতীর্ণ বিষয়ে বিশ্বাস করেন, তবে আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস আনা বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে সুরাহ আশ-শু’আরার নিচের এই আয়াতগুলি বিবেচনায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।
এবং এই কুর'আন শয়তানরা অবতীর্ণ করেনি।(আয়াত-২১০)
তারা এ কাজের উপযুক্ত নয় আর তারা এর ক্ষমতাও রাখে না।(আয়াত-২১১)
নিশ্চয় তাদেরকে শোনার স্থান থেকে দূরে রাখা হয়েছে।(আয়াত-২১২)
আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে?(আয়াত-২২১)
তারা অবতরণ করে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, পাপীর কাছে।(আয়াত-২২২)
তারা গুজব ছড়ায়, তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।(আয়াত-২২৩)
কাজেই [sb]আল্লাহই বলে দিচ্ছেন শয়তানের পক্ষে এ কাজ অসম্ভব ।[/sb]
(৪) যদি অন্য ধর্মের অনুসারীরা কেউ মনে করেন গুটি কয়েক স্যাটানিক ভার্সেস সত্য ঘটনা, অন্য আয়াতগুলি সব মিথ্যাচার, তবে এমন অভিযোগ ছেলেমানুষিই হবে। এবং সেক্ষেত্রে তাদেরকেই যুক্তিযুক্তভাবে প্রমাণ করে দেখাতে হবে এমন অদ্ভুত দাবীর কী সারবস্তু।
(৫) একাডেমিক নাস্তিক যারা ঐশ্বরিকতায় বিশ্বাস করেন না, এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটনার বিশ্লেষণ করতে চান তারা স্যাটানিক ভার্সেসের ঘটনাটির বিচারের ক্ষেত্রে হযরত মোহাম্মদকে নবী (তাঁর প্রতি শান্তি) হিসেবে নয়, একজন কৌশলী আরব চরিত্র হিসেবে দেখতে চাইবেন। যে চরিত্রের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিলো। এখন এই পার্স্পেকটিভটি বিবেচনায় আনা যাক,স্যাটানিক ভার্সেস সম্পর্কে।
অভিযোগ হলো, প্যাগানদের সন্তুষ্টির জন্য লাত ওজ্জা,মানাতের মধ্যাস্থতার সুপারিশ মেনে নিতে ঐ দুটি আয়াত নবী মোহাম্মদ ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ করেছিলেন বা নাযিল করিয়েছিলেন, তাঁর নব্যুয়তির পঞ্চম বছরে। যদি তাই হয় তবে তবে তা বাদ দেয়া হলো মক্কা বিজয়ের সময় প্যাগানদের সাথে মানিয়ে চলার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার পর। এতো বছর পর এটা কীভাবে সম্ভব? শয়তানের বিভ্রান্তি জিব্রাইল ফেরেশতা এসে ধরিয়ে দিলেন এতো বছর পর? যে দির্ঘ সময়ের ব্যবধানে আরও কতো আয়াত নাযিল হলো, কিন্তু একবারও সংশোধন করে দেয়া হলো না? আল্লাহর নবীর কাছে শয়তানের আয়াত নাযিল হবে আর আল্লাহ তা মূহূর্তেই সংশোধন করবেন না?
আরও গড়মিল রয়ে যায়, প্যগানদের সাথে সমঝোতার ব্যাপারটি টেকে না কেননা মক্কাতেই সূরাহ আশ-শু’আরার ২১০-২১২,২২১-২২২ আয়াতগুলির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন শয়তানের পক্ষ থেকে কুর’আনের আয়াত নাযিল করা সম্ভব নয়। এটি প্রমাণ করাও সম্ভব নয়, নবী মক্কা জীবনের বেশ কয়েকটি বছর উক্ত স্যাটানিক ভার্সেস মেনে চলেছেন প্যাগানদের সাথে। অন্যান্য আয়াত, ঘটনাক্রম তার পক্ষে কী সাক্ষ্য দেয়? একটু মনযোগের সাথে বিচার করলেই এর অসাড়তা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
(১) স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্কটির সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় প্রথম মুসলিম যুগের ঐতিহাসিক আল-ওয়াক্বিদির(৭৪৭-৮২২) সংগ্রহকৃত কাহিনীতে। সেখানে একটি ঐতিহাসিক কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে দাবী করা হয় সূরাহ অবতীর্ণ হওয়ার সময় শয়তান প্রতারনামূলকভাবে নবী হযরত মোহাম্মদকে(তাঁর প্রতি শান্তি) দিয়ে কয়েকটি আয়াত উচ্চারণ করিয়ে নেয়। সুরাহ নাজমের(অধ্যায়-৫৩) ১৯ থেকে ২০ অথবা ২১ নম্বর আয়াতের পর বিতর্কিত আয়াতদুটি ছিলো বলে ধরে নেয়া হয়। পরে আয়াত দু'টি কুর’আন থেকে বাদ দেয়া হয়। মক্কায় (নব্যুয়তের পঞ্চম বছরে) এ ঘটনা ঘটে।
‘তোমরা লাত ও ওজ্জাহ সম্পর্কে ভেবে দেখেছো?
আর তৃতীয় অন্যটি মানাত সম্পর্কে?
পুত্র তোমাদের জন্যে এবং কন্যা আল্লাহর জন্য?’ -৫৩ঃ১৯-২১
বিতর্কিত আয়াত দুটি হচ্ছে,
‘তারা হলো উচ্চে উড্ডীয়মান মহিমান্বিত সাড়স(ঘারানিক),তাদের মধ্যস্থতা প্রত্যাশিত।’
এরপর নবী মোহাম্মদ ও প্যাগান ধর্মীয় নেতারা একত্রে সেজদা করেন। ওয়াক্বিদির এই দাবীই স্যাটানিক ভার্সেস বিতর্কের প্রধান উৎস বলা যায়।
(২) নাস্তিক পক্ষে এটি বিশ্বাস করার সুযোগ নেই যে নবী মুহাম্মাদের কাছে অবতীর্ণ কুর’আনেরর মধ্যে কয়েকটি আয়াত শয়তান কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছিলো। কেননা নাস্তিকরা নবী, ঈশ্বর, আসমানী কিতাব, শয়তানের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেন না। কাজেই স্যাটানিক ভার্সেসের অস্তিত্বের অভিযোগ তাদের কাছে অর্থিহীন হওয়ার কথা।
(৩) মুসলিম ব্যাতীত অন্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষেও স্যাটানিক ভার্সেসের অস্তিত্বের অভিযোগ মেনে নেয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। কেননা তারা নবী মোহাম্মদকে তাঁর প্রতি অবতীর্ণ কুর’আন, এমনকি আল্লাহকেও স্বীকার করেন না। আর যদি শয়তান কর্তৃক অবতীর্ণ বিষয়ে বিশ্বাস করেন, তবে আল্লাহর অবতীর্ণ বিষয়ের প্রতিও বিশ্বাস আনা বাঞ্ছনীয়। সে ক্ষেত্রে সুরাহ আশ-শু’আরার নিচের এই আয়াতগুলি বিবেচনায় আনার জন্য অনুরোধ করছি।
এবং এই কুর'আন শয়তানরা অবতীর্ণ করেনি।(আয়াত-২১০)
তারা এ কাজের উপযুক্ত নয় আর তারা এর ক্ষমতাও রাখে না।(আয়াত-২১১)
নিশ্চয় তাদেরকে শোনার স্থান থেকে দূরে রাখা হয়েছে।(আয়াত-২১২)
আমি আপনাকে বলব কি কার নিকট শয়তানরা অবতরণ করে?(আয়াত-২২১)
তারা অবতরণ করে প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, পাপীর কাছে।(আয়াত-২২২)
তারা গুজব ছড়ায়, তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।(আয়াত-২২৩)
কাজেই [sb]আল্লাহই বলে দিচ্ছেন শয়তানের পক্ষে এ কাজ অসম্ভব ।[/sb]
(৪) যদি অন্য ধর্মের অনুসারীরা কেউ মনে করেন গুটি কয়েক স্যাটানিক ভার্সেস সত্য ঘটনা, অন্য আয়াতগুলি সব মিথ্যাচার, তবে এমন অভিযোগ ছেলেমানুষিই হবে। এবং সেক্ষেত্রে তাদেরকেই যুক্তিযুক্তভাবে প্রমাণ করে দেখাতে হবে এমন অদ্ভুত দাবীর কী সারবস্তু।
(৫) একাডেমিক নাস্তিক যারা ঐশ্বরিকতায় বিশ্বাস করেন না, এবং ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ঘটনার বিশ্লেষণ করতে চান তারা স্যাটানিক ভার্সেসের ঘটনাটির বিচারের ক্ষেত্রে হযরত মোহাম্মদকে নবী (তাঁর প্রতি শান্তি) হিসেবে নয়, একজন কৌশলী আরব চরিত্র হিসেবে দেখতে চাইবেন। যে চরিত্রের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিলো। এখন এই পার্স্পেকটিভটি বিবেচনায় আনা যাক,স্যাটানিক ভার্সেস সম্পর্কে।
অভিযোগ হলো, প্যাগানদের সন্তুষ্টির জন্য লাত ওজ্জা,মানাতের মধ্যাস্থতার সুপারিশ মেনে নিতে ঐ দুটি আয়াত নবী মোহাম্মদ ইচ্ছাকৃত উচ্চারণ করেছিলেন বা নাযিল করিয়েছিলেন, তাঁর নব্যুয়তির পঞ্চম বছরে। যদি তাই হয় তবে তবে তা বাদ দেয়া হলো মক্কা বিজয়ের সময় প্যাগানদের সাথে মানিয়ে চলার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবার পর। এতো বছর পর এটা কীভাবে সম্ভব? শয়তানের বিভ্রান্তি জিব্রাইল ফেরেশতা এসে ধরিয়ে দিলেন এতো বছর পর? যে দির্ঘ সময়ের ব্যবধানে আরও কতো আয়াত নাযিল হলো, কিন্তু একবারও সংশোধন করে দেয়া হলো না? আল্লাহর নবীর কাছে শয়তানের আয়াত নাযিল হবে আর আল্লাহ তা মূহূর্তেই সংশোধন করবেন না?
আরও গড়মিল রয়ে যায়, প্যগানদের সাথে সমঝোতার ব্যাপারটি টেকে না কেননা মক্কাতেই সূরাহ আশ-শু’আরার ২১০-২১২,২২১-২২২ আয়াতগুলির মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে দিলেন শয়তানের পক্ষ থেকে কুর’আনের আয়াত নাযিল করা সম্ভব নয়। এটি প্রমাণ করাও সম্ভব নয়, নবী মক্কা জীবনের বেশ কয়েকটি বছর উক্ত স্যাটানিক ভার্সেস মেনে চলেছেন প্যাগানদের সাথে। অন্যান্য আয়াত, ঘটনাক্রম তার পক্ষে কী সাক্ষ্য দেয়? একটু মনযোগের সাথে বিচার করলেই এর অসাড়তা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
Comments
Post a Comment