আল্লাহর নিদর্শন-২ আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন -আইনুল বারী

৭৪.আল্লাহর নিদর্শন-২
আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন
-আইনুল বারী
--  ---         ---  ---
আল্লাহর নিদর্শন বলতে অনেকে মনে করি, তা নিশ্চয় মিরাকেল কিছু যেমন আল্লাহ নবী-রাসুলদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন, বিশ্বাসকে দৃঢ় করতে ও বিপথগামী স্বজাতিকে পথ দেখানোর জন্য। এমন নিদর্শনের অন্তর্গত ঐশী বাণীও। নিশ্চয় তা আশ্চর্য ধরণের নিদর্শন।সাধারণ মানুষের জীবনেও নানা মিরাকেল অভিজ্ঞতা ঘটে থাকে। কিন্তু চিন্তাশীল মানুষের জন্য প্রকৃতির ও মানন সভ্যতার উত্থাত পতনের সাধারণ নিয়ম ও ঘটনা থেকে বহু নিদর্শন কুর'আনে বর্ণিত হয়েছে, যেগুলি গুরুত্ব দিয়ে অনুধ্যানের জন্য আল্লাহ বলেছেন। সে সমস্ত নিদর্শনকে সাধারণ ভাবনায় আল্লাহর নিদর্শন বলে মনে হয় না, কিন্তু আল্লাহ মানুষকে অনুধাবনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলি আল্লাহের মহিমা বোঝার জন্য যথেষ্ট। যদি আমরা এ্মন সকল সাধারণ নিয়ম ও ঘটনাগুলিকে দার্শনিক মন নিয়ে অনুধাবনে সক্ষম হই, আমরা সহজেই বুদ্ধিতে ও হৃদয়ে আল্লাহর অস্তিত্বকে অনুভব করতাম।

আল্লাহর অনুগ্রহের নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে এমন কিছু আয়াত তুলে ধরলামঃ

তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের জন্য খাদ্য হিসেবে ফল উৎপাদন করান, আর নৌযানসমূহকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, যেনো তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলাচল করে, আর তোমাদের সেবায় নিয়োজিত(উপযোগী) করেছেন নদীসমূহ।’-সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩২

আর তিনি সূর্য ও চন্র্ছকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, উভয়ে নিরবচ্ছিন্ন নিজেদের পথে চলে, রাত ও দিনকে তোমাদের সেবায় লাগিয়েছেন।’-সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩৩

আর যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছো, তার সবই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন; আর তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ(নেয়ামত) গণনা করো, তা গুণে শেষ করতে পারবে না; নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।’ -সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩৪

তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, এ থেকে তোমরা পান করো, আর এ থেকেই উদ্ভিদকূল জন্মায়, যেখানে তোমরা পশুচারণ করো।’-সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১০

ওভাবেই তিনি তোমাদের জন্যে ফলান শস্য, যয়তুন, খেজুর, আঙ্গুর ও সব ধরণের ফল। নিশ্চয় চিন্তাশীলদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১১

আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যেও তোমাদের জন্যে শিক্ষা রয়েছে; আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থ থেকে, নিঃসরিত বর্জ্য ও রক্ত থেকে, বিশুদ্ধ দুধ, যা উপাদেয় পানকারীদের কাছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৬

আর খেজুর ও আংগুর ফল থেকে, তোমরা তৈরি করো কড়া পানীয়(মাদক)ও উত্তম খাবার; এতে নিশ্চয় বোধ সম্পন্ন লোকেদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৭
আর আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়ে বললেনঃ মৌচাক গড়ো পাহাড়ে, গাছে ও মানুষের বসতিতে।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৮

তারপর সব রকমের ফল আহার করো, আর তোমার প্রতিপালকের সরল পথে চলো; তার উদর থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, তাতে আছে মানুষের জন্যে রোগের প্রতিকার; নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্যে আছে নিদর্শন।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৯

আল্লাহই তোমাদের গৃহকে বসবাসের স্থান করেছেন, আর পশুর চামড়া দিয়ে তাঁবুর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যা তোমরা ভ্রমণে ও শিবির স্থাপনের সময় সহজে বহন করতে পারো; আর তাদের পশম, লোম ও চুল থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দিয়েছেন সাজ-সরঞ্জাম ও ব্যবহার উপযোগী সামগ্রী।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৮০

আর আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট বস্তু থেকে তোমাদের জন্যে ছায়া দিয়েছেন, আর পাহাড়ে পাহাড়ে তোমাদের জন্যে আশ্রয় দিয়েছেন, আর তিনি তোমাদের জন্যে পরিধেয়ে বস্তুর ব্যবস্থা করেছেন গরম হতে রুক্ষা পেতে ও পরিধেয়ের ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের যুদ্ধবিগ্রহের সময় বিপদ হতে রক্ষা পেতে; এভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেন, যেনো তোমরা (প্রতিপালকের কাছে) আত্মসমর্পণ করো ।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৮১

আর তিনি তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন রা্ত, দিন, সূর্য ও চন্দ্রকে, আর নক্ষত্র সমূহ সেবায় নিয়োজিত রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে; নিশ্চয় এতে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১২

আর তোমাদের জন্য তিনি পৃথিবীতে যা কিছু রং-বেরঙের বস্তু বহু গুণে ছড়িয়ে দিয়েছেন; নিশ্চয় স্মরণকারী লোকেদের জন্য তাতে নিদর্শন রয়েছে।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৩

তিনিই কাজে নিয়োজিত করেছেন সমুদ্রকে, যেনো তা থেকে তোমরা কোমল তাজা মাংস খেতে পারো ও তা সেঁচে বের করতে আনতে পা্রো অলঙ্কারাদি তোমাদের পরিধেয় সজ্জার জন্য; আর তুমি নৌযানসমূহকে এর বুক চিরে চলতে দেখো, যেনো তোমরা আল্লাহর প্রাচুর্যময় অনুগ্রহের সন্ধান করতে পারো, আর যেনো (অনুগ্রহ স্বীকার করে তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞ হও।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৪

আর তিনি পৃথিবীর উপর দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যেনো তা তোমাদেরকে নিয়ে হেলে না পড়ে; আর নদী ও পথ-ঘাট করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা চলাচলের পথ খুঁজে পাও।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৫

আর পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন; আর নক্ষত্রের সাহায্যে যেনো তারা চলাচলের পথের নিশানা পায়।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৬

তবে যিনি সৃষ্টি করেন তিনি কি তার সমতূল্য যে সৃষ্টি করে না? তোমরা কি স্মরণ করবে না?’-সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৭

'নিশ্চয় ভূমন্ডলে ও পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।'- সুরাহ জাসিয়াহ(অধ্যায়-৪৫),আয়াত-৩

'আর তোমাদের সৃষ্টিতে, এবং যে সকল বিচরণশীল প্রাণী তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন, তারা নিদর্শন দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য।'- সুরাহ জাসিয়াহ(অধ্যায়-৪৫),আয়াত-৪

আর দিন ও রাতের পার্থক্যে, আর আল্লাহ আকাশ হতে যে প্রয়োজনীর সরবরাহ(রিযিক) প্রেরণ করেন, তারপর তা দিয়ে জমিনকে এর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন, আর বাতাসের পরিবর্তনে, (এসব কিছুতে) বুদ্ধিমান মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে।’-সুরাহ জাসিয়াহ(অধ্যায়-৪৫),আয়াত-৫

আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যেও তোমাদের জন্যে শিক্ষা রয়েছে; আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থ থেকে, নিঃসরিত বর্জ্য ও রক্ত থেকে, বিশুদ্ধ দুধ, যা উপাদেয় পানকারীদের কাছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৬

আর খেজুর ও আংগুর ফল থেকে, তোমরা তৈরি করো কড়া পানীয়(মাদক)ও উত্তম খাবার; এতে নিশ্চয় বোধ সম্পন্ন লোকেদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৭

আর আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়ে বললেনঃ মৌচাক গড়ো পাহাড়ে, গাছে ও মানুষের বসতিতে।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৮

তারপর সব রকমের ফল আহার করো, আর তোমার প্রতিপালকের সরল পথে চলো; তার উদর থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, তাতে আছে মানুষের জন্যে রোগের প্রতিকার; নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্যে আছে নিদর্শন।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৯

-উল্লেখিত আয়াতগুলি থেকে অনুধাবন করার মতো বিষয়টি হলো, প্রকৃতির মাঝে যা কিছু প্রাকৃতিক, স্বাভাবিক ঘটনা ও নিয়ম বলে মনে করা হয়, অথবা মানুষের নিজের উদ্ভাবন বলে বিশ্বাস করা হয়, তা প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টি জগতের মহান প্রতিপালকেরই ইচ্ছা ও অনুগ্রহের ফসল, কিন্তু তা অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না বা আজগুবি বলে অস্বীকার করে।

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী