সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষ উগ্রতার জবাব কি পাল্টা ঘৃণা-বিদ্বেষ, উগ্রতা? -আইনুল


৪১.সাম্প্রদায়িক ঘৃণা-বিদ্বেষ উগ্রতার জবাব কি পাল্টা ঘৃণা-বিদ্বেষ, উগ্রতা?
-আইনুল বারী

উগ্রতার জবাব উগ্রতা দিয়ে করতে গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে, ঘৃণার পালটা ঘৃণা আরও ঘৃণার জন্ম দিবে।...
কুর'আনের নিচের আয়াতগুলি প্রমাণ করে ইসলাম ধর্মে যুক্তি-তর্কে ঘৃণা, ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ, হুমকির, অন্যায়-অত্যাচার, খুনোখুনির কোনো স্থান নেই-

আপনি প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে মানুষকে আপনার প্রতিপালকের পথে আহবান করুন। সবচেয়ে ভালো পন্থায় তাদের সাথে আলাপ করুন। নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক বিপথগামীদের সবচেয়ে ভালো জানেন, আর তাকেও সবচেয়ে ভালো জানেন যে সঠিক পথপ্রাপ্ত।’ -সুরাহ নহল (অধ্যায়-১৬)আয়াত-১২৫

ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুণ, সৎ কাজের নির্দেশ দেন এবং অজ্ঞদের উপেক্ষা করুন।
-
সূরাহ রা'রাফ,অধ্যায়-৭ আয়াত-১৯৯

'আর নিশ্চয় যে ধৈর্য ধারণ করে ও ক্ষমা করে দেয় তা হবে এক দৃঢ়তারই কাজ।'
-
সুরাহ আশ-শুরা(অধ্যায়-৪২),আয়াত-৪৩

'সমান নয় ভালো ও মন্দ। মন্দকে ভালো দিয়ে পালটে দিন। আর আপনার সাথে যার শত্রুতা, সে তবে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।' 
'
এ চরিত্র তারাই লাভ করে যারা ধৈর্য অনুশীলন করে আর আত্মসংযমী; কেবল যারা খুবই ভাগ্যবান।' 
-
সুরাহ হা-মীম সাজদাহ, অধ্যায়-৪১, আয়াত-৩৪,৩৫

আর আমার বান্দাদের বলে দিন, তারা যেনো তেমন কথাই বলে যা সবচেয়ে উত্তম। নিশ্চয় শয়তান তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’-সুরাহ আল-ইসরা (রাতের ভ্রমণ) অধ্যায় ১৭,আয়াত-৫৩

'পরম দয়াময়ের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে, যখন অজ্ঞরা তাদেরকে সম্বোধন করে তখন শান্তিসূচক কথা বলে।'-সূরাহ ফুরকান,অধ্যায়-২৫,আয়াত-৬৩

প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চাইলে ততোটুকু গ্রহণ করবে, যতোটুকু অন্যায় তোমরা পেয়েছো। আর ধৈর্য ধারণ করলে ধৈর্যশীলদের জন্য সেটাই উত্তম।'-সুরাহ নাহল, (অধ্যায়-১৬)আয়াত-১২৬

'তুমি কি লক্ষ্য করো না, আল্লাহ কীভাবে উপমা দেনঃ 
একটি ভালো কথা হলো একটি ভালো গাছের মতো, 
এর শেকড় থাকে দৃঢ় ভাবে গ্রোথিত, 
এর শাখা-প্রশাখাগুলি হয় আকাশে উত্থিত।'
'
এটি সব সময় ফল দেয়, আল্লাহর ইচ্ছায়। 
আর এভাবে আল্লাহ মানুষের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যেনো তারা চিন্তা-ভাবনা করে।' 
'
এবং একটি মন্দ কথার উদাহরণ হচ্ছে একটি দুর্বল গাছের মতো, 
মাটির উপরিতল থেকে উপড়ে নেয়া, 
আর তার নেই টিকে থাকার মতো স্থিতি।' -সুরাহ, ইব্রাহীম,১৪ঃ ২৪-২৬

'আল্লাহ তাদের অন্তরের সবকিছু পুরোপুরি জানেন; তাই তাদেরকে এড়িয়ে চলুন। এবং তাদের সদুপদেশ দিন ও হৃদয়গ্রাহী কথা বলুন। আমি রাসুল এ কারণেই পাঠিয়েছি, যেন আল্লাহর আদেশে তাঁর আনুগত্য করে, তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করার পর যদি আপনার কাছে এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো এবং রাসুলও ক্ষমা চাইতেন, তবে তারা আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়ালু পেতো।'-সূরাহ নিসা(অধ্যায়-),আয়াত-৬৩

আর আমি তাদের বিভক্ত করেছি দুনিয়ায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ে, 
যাদের কিছু ঠিক পথের অনুসারী আর কিছু এমন নয়। 
আর আমি তাদের ভালো-মন্দ দিয়ে পরীক্ষা করছি, যেনো তারা ফিরে আসে।
আর আমার সৃষ্টিতে এমন এক দল আছে যারা সঠিক পথ দেখায় এবং ন্যায় বিচার করে। 
তাদেরকে সৎ পথে ডাকলে তারা কিছুই শুনবে না। 
এবং দেখবেন যে, আপনার দিকে চেয়ে আছে অথচ তারা কিছুই দেখে না।
ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুণ, সৎ কাজের নির্দেশ দেন এবং অজ্ঞদের উপেক্ষা করুন। 
-
সূরাহ রা'রাফ(অধ্যায়-), আয়াত-১৬৮,১৮১,১৯৮,১৯৯

বলুন, হে মানুষ! যদি তোমরা আমার ধর্ম নিয়ে সংশয়ী হও, তবে আমি তাদের এবাদত করি না যাদের এবাদত তোমরা করো আল্লাহকে ছেড়ে, বরং আমি এবাদত করি আল্লাহর, যিনি তোমাদের মৃত্যু দেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য।’-সুরাহ ইউনুস আয়াত ৯৯-১০৪

'আল্লাহ অত্যাচারিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো মন্দ কথার প্রচারণা পছন্দ করেন না। আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব দ্রষ্টা।'-সুরাহ নিসা আয়াত ১৪৮

'কেউ যদি সন্মান কামনা করে, জেনে রাখো সকল সন্মান আল্লাহর। পবিত্র সৎ কথাগুলি তাঁর দিকে আরোহণ করে; আর সৎকর্ম তাকে (উচ্চ মর্যাদায়) উত্তোলন করে। আর যারা অশুভ কাজের চক্রান্ত করে তারা ভয়ানক শাস্তি লাভ করবে, আর তাদের চক্রান্ত বিফলে যাবে।' -সূরাহ ফাতির(অধ্যায়-৩৫), আয়াত-১০

'বিশ্বাসীদের বলে দিন, তারা যেনো তাদেরকে ক্ষমা করে, যারা আল্লাহর ঐ দিনগুলির ব্যাপারে আশাবাদী(বিশ্বাসী) নয় যে তিনি মানুষের অর্জিত কর্মের প্রতিদান দিবেন।'
'
যে সৎকর্ম করে সে নিজের জন্যই করে,আর যে অসৎকর্ম করে তা তার নিজের বিরুদ্ধেই যাবে।এবং তারপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।'
-
সূরাহ জা'থিয়া (অধ্যায়-৪৫),আয়াত-১৪,১৫

আর যখন তারা অসার(বাজে) কথাবার্তা শোনে তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও বলেঃ আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। তোমাদের প্রতি শান্তি;অজ্ঞদের অনুসরণ করতে চাই না।
-
সূরাহ কাসাস(কাহিনীসমূহ)(অধ্যায়-২৮),আয়াত-৫৫

আর আপনি যখন তাদেরকে দেখেন,যারা আমার আয়াত(প্রত্যাদেশ)সমূহ নিয়ে অসার কথাবার্তায়(কুটতর্কে) লিপ্ত, তখন তাদের কাছ থেকে সরে যান যতোক্ষণ না তারা অন্য আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়।আর যদি শয়তান আপনাকে ভুলিয়ে দেয়,তবে স্মরণে আসার পর অন্যায়কারীদের সাথে বসবেন না।
আর যারা তাকওয়াধারী (আল্লাহ সচেতন) তারা মোটেও তাদের(অবিশ্বাসী/পথভ্রষ্ট্রদের) ব্যাপারে দায়বদ্ধ নয়, দায়িত্ব শুধু তাদেরকে(অবিশ্বাসী/পথভ্রষ্ট্রদেরকে) সতর্ক করে দেয়া-এতে হয়তো তারাও আল্লাহ সচেতন হতে পারে।’-সূরাহ আন'আম(অধ্যায়-),আয়াত-৬৮,৬৯

'আর আল্লাহ আপনার হৃদয়ে কোনো কষ্টের ছোঁয়া দিলে তিনি ছাড়া আর কেউ নেই তা মুছে ফেলার । এবং তিনি কল্যাণ চাইলে তা ফিরিয়ে নেয়ারও কেউ নেই।
তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে যা ইচ্ছা তাই দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
'
আপনার কাছে আসা অহীর/অনুপ্রেরণার অনুসরণ করুন, আল্লাহর নির্দেশ পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন, তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী।-সুরাহ ইউনুস (আয়াত-১০৭, ১০৯)

আর বাস্তবিকই আপনার পূর্ববর্তী রাসূলগণও প্রত্যাখ্যাত/অস্বীকৃত হয়েছিলেন, কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েও তারা র্ধৈযশীল ছিলেন ও নির্যাতিত হয়েছেন তাদের কাছে আমার সাহায্য এসে পৌঁছুনো না পর্যন্ত।আল্লাহর বাণী পরিবর্তন করার কেউ নেই,আর নিশ্চয় আপনার কাছে রাসূলদের কিছু কাহিনী পৌঁচেছে। 
-
সূরাহ আন'আম(অধ্যায়-),আয়াত-৩৪

ধৈর্যের কারণে তোমাদের ওপর অনাবিল শান্তি বর্ষিত হোক, এ পরিণাম কতো সুন্দর!’-সুরাহ রাআদ, আয়াত-২৪
---
এই আয়াতগুলি কি যথেষ্ট নয়?

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী