বিশ্বাসের ধর্ম/দর্শন বনাম অবিশ্বাসের ধর্ম/দর্শন -১ -যুক্তিবাদ ও নৈতিকতার মান্দন্ড -আইনুল বারী
৭২.বিশ্বাসের ধর্ম/দর্শন বনাম অবিশ্বাসের ধর্ম/দর্শন -১
-যুক্তিবাদ
ও নৈতিকতার মান্দন্ড
-আইনুল বারী
---------------------------------------------
নাস্তিক্যবাদীরা খুব অপছন্দ করে থাকেন 'বিশ্বাসের ধর্ম' কথাটি জুড়ে দেয়া বিতর্কের সম্মুখীন হতে। বিশ্বাসের আগে 'ধর্ম' কথাটি
যোগ না হলে হয়তো এতো অপছন্দ হতো না। তবে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক চলমান দুই
বিরোধপূর্ণ বিশ্বাসের প্রকার-প্রকৃতি কেমন।
(১) আস্তিকতাবাদ আনুসারে, বিজ্ঞান হচ্ছে বস্তুজগতকে বর্ণনা কারী একটি পদ্ধতি, ক্যাটাগরি বা ভাষা।তবে বিজ্ঞানের বাইরেও কিছু সত্য আছে ও
জ্ঞান আছে,অধরা।যে অজ্ঞেয় জ্ঞানের
কিছু কিছু নিদর্শন আমরা কান্ড জ্ঞানে তথা যুক্তিবোধে, সজ্ঞায় ও অস্তিত্বের অন্তিম উপলব্ধিতে প্রগাড়ভাবে লাভ করি।
পক্ষান্তরে, নাস্তিক্যবাদীরা বিশ্বাস
করেন একমাত্র বিজ্ঞানেরই অধিকার আছে সমস্ত অজানাকে জানার।সব সত্য জ্ঞান শুধু
বিজ্ঞান থেকেই আসতে হবে।বস্তুজগতের জ্ঞানের বাইরে অধরা কোনো কিছু জ্ঞানের সংজ্ঞায়
পড়ে না, তা হবে ভুল বিশ্বাস। কিন্তু হালের কোয়ান্টাম ফিজিক্স কম্পমান কন্ঠস্বের বলছে, বস্তুর বাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের অনিরেপক্ষ সুনিশ্চিত
জ্ঞান লাভ আদৌ সম্ভব নয়।চেতনায় বাইরের বহির্জগতের সুনিশ্চিত জ্ঞান ও সত্য কী আমরা
হয়তো কখনো জানবো না। দর্শন
শাস্ত্রের শিক্ষকরাও বহির্জগতের জ্ঞান লাভের ক্ষেত্রে এই অনিশ্চয়তাকে বহু আঙ্গিকে
যুগ যুগ ব্যাখ্যা করে চলেছে। কিন্তু শেষ মীমাংসা আজও হয়নি।
তা
হলে বিজ্ঞানেই সব জ্ঞান সম্ভব- এমন দাবী কি চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি
গোঁড়ামি বা (বস্তুবাদী) মৌলবাদী বাধা নয়? তর্ক
নয়, কেবল বুঝতে চাই।
(২) আস্তিকতাবা অনুসারে
সৃষ্টি জগত ও সৃষ্টিকর্তা এক ও অভিন্ন নয়।
সৃষ্টি জগত সৃষ্টি জগতের নিয়মের অধীন, আর সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি জগতের নিয়মের অধীন নন, বরং তিনিই তার কারণ, তার উৎস। সৃষ্ট জগত সৃষ্ট হলেও সৃষ্টিকর্তা সৃষ্ট হতে পারেন না। মানবিক ক্ষুদ্র জ্ঞান শক্তিতে তাঁকে পূর্ন সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সৃষ্টিকর্তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি-বরং তিনি আছেন,ছিলেন,থাকবেন।
সৃষ্টি জগত সৃষ্টি জগতের নিয়মের অধীন, আর সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি জগতের নিয়মের অধীন নন, বরং তিনিই তার কারণ, তার উৎস। সৃষ্ট জগত সৃষ্ট হলেও সৃষ্টিকর্তা সৃষ্ট হতে পারেন না। মানবিক ক্ষুদ্র জ্ঞান শক্তিতে তাঁকে পূর্ন সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সৃষ্টিকর্তাকে কেউ সৃষ্টি করেনি-বরং তিনি আছেন,ছিলেন,থাকবেন।
নাস্তিক্যবাদ এই যুক্তি না মানলেও প্রকৃতিতে একই ধরণের ঐশ্বরিকতা
আরোপ করতে বাধ্য হন। তাদের যুক্তি দেখাতেই হয়, প্রকৃতি
কোনো সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই নিজে থেকেই চিরকাল আছে ও থাকবে।
প্রকৃতিই কি নাস্তিক্যবাদীদের ঐশ্বর নয়? অন্তত একটি ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্য মেনে নিতে হচ্ছে।
প্রকৃতিই কি নাস্তিক্যবাদীদের ঐশ্বর নয়? অন্তত একটি ঐশ্বরিক বৈশিষ্ট্য মেনে নিতে হচ্ছে।
(৩) নৈতিকতার মানদন্ড কী হবে?
এমন
প্রশ্নে আস্তকতাবাদীরা আল্লাহ/গড/ভগবানের নির্দেশিত নৈতিক জীবন দর্শনের কথা বলেন।
যার কিছু চিরায়ত, কিছু প্রায়োগিক। তবে
এই নৈতিকতার মানদন্ডে চিন্তা করলে আল্লাহর স্থান সর্বোচ্চ ন্যায় বিচারকের আসনে, যিনি সর্বোচ্চ পবিত্রতা,
শুদ্ধতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আধার। নাস্তিক্যবাদীর এমন নৈতিকতা মানবেন না, তারা ব্যক্তিক নৈতিকতাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন। একটি
নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কতিপয় ব্যাক্তি নিজেদের ভেদ-বুদ্ধিতে যে সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন
করে তাই তাদের কাছে স্বীকৃত নৈতিকতার মানদন্ড। কিন্তু
মানুষতো নৈতিকতার সবচেয়ে উত্তম ও সর্বজনীন মান অর্জন করতে পারে না।ব্যক্তি
চরিত্রের স্বার্থপরতায়, গোত্রীয় সংকীর্ণ বিশ্বাসে, জাতিয়তাবাদী উগ্র আবেগ-মোহগ্রস্ততায় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা-
নিয়ন্ত্রণের কারণে ও কৌশলে মানুষ প্রতি মুহূর্তেই পরষ্পর হানাহানিতে লিপ্ত থাকে। অস্তিত্ববাদী দার্শনিক সাহিত্যিক দস্তয়েভস্কি লিখেছিলেন, ‘If God did not exist, everything would be permitted.’ অস্তিত্ববাদ অনুসারে, যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে তবে ব্যক্তি মানুষের অস্তিত্বের প্রয়োজনে যে কোনো কিছুই অনুমোদিত হতে পারে, ব্যক্তি মানুষ চূড়ান্ত অর্থে নিজেকে ছাড়া নির্ভর করার মতো, কৃতকর্মের দায়িত্ব নেয়ার মতো ও সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে কাউকেই পায় না। ব্যক্তিমানুষের এইযে নিজের ভিতরে আটকে পড়া তা মানব সমাজের নৈতিকতাকে অজস্রভাবে সংকটে ফেলতে পারে।
সৃষ্টিকর্তার নৈতিক অবধারণ বলতে যদি সংকীর্ণ স্বার্থবাদের উর্ধ্বের
এক পরম নৈতিকতাবোধকে বোঝায় তবে তেমন নৈতিকতার দিকেই কি মানব সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে
না? ঐশ্বরিক স্বার্থহীন যে
নৈতিকতার মহান সর্বজনীনতা, তা তো চূড়ান্ত লক্ষ্য
অর্জনের মতোই স্বপ্নময়; নয় কি?
Comments
Post a Comment