নাবী-রাসুলদের(তাঁদের উপর শান্তি) মর্যাদার স্তর -আইনুল বারী
৬৫.নাবী-রাসুলদের(তাঁদের উপর শান্তি)
মর্যাদার স্তর
-আইনুল বারী
-- -- ----
নাবী-রাসুলদের(তাঁদের উপর শান্তি) মর্যাদা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে। মুসলমান সমাজে অনেকেরই অন্ধবিশ্বাস আমাদের শেষ নবী মুহাম্মদ(সাঃ)-ই(তাঁর উপর
শান্তি) সর্বশেষ্ঠ নবী এবং মানব জাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। উল্লেখযোগ্য
সংখ্যকরা মনে করেন তিনি নূরের তৈরি, নূরনবী, মহান আল্লাহ তাঁকে সৃষ্টি না করলে
পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না। অন্য দিকে যিশু খৃষ্ট তথা ঈসা নবীকে (তাঁর প্রতি শান্তি) খৃষ্টীয় অনুসারীরা স্বয়ং গড বা ইশ্বরেরই মানব রূপ হিসেবে দেখে থাকেন।
ইহুদীরা পরবর্তী নবীদের নবী হিসেব মানেন না। কুর'আনে
নবীদের মর্যাদা নিয়ে আল্লাহ সুবহানা'তায়ালা কী বলেছেন, এ
সম্পর্কে সুরাহ বাক্বারাহ-য় নির্দিষ্ট কয়েকটি আয়াত আছেঃ
'তারপর
আমি গ্রন্থের অধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত
করেছি। তাঁদের মধ্যে কেউ নিজ আত্মার প্রতি অবিচারকারী/অত্যাচারী/ জুলুমকারী আর কেউ
মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী(muq'taṣidun)
, আর কেউ
আল্লাহর নির্দেশে কল্যাণ পথে অগ্রগামী(sābiqun bil-khayrāti ); এটাই
মহানুগ্রহ।'-সূরাহ
ফাতির(অধ্যায়-৩৫),আয়াত-৩২
'তারপর
আমি গ্রন্থের অধিকারী করেছি তাদেরকে যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মনোনীত
করেছি। তাঁদের মধ্যে কেউ নিজ আত্মার প্রতি জুলুমকারী, আর কেউ
মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী,
আর কেউ
আল্লাহর নির্দেশে কল্যাণ পথে অগ্রগামী; এটাই মহানুগ্রহ।'-সূরাহ
ফাতির(অধ্যায়-৩৫),আয়াত-৩২
'আমি
রাসুলদের মাঝে কাউকে অন্যের উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা
বলেছেন,
আর কারো
মর্যাদা অনেক উচ্চতর করেছেন এবং আমি মরিয়ম পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট অতীন্দ্রীয় ক্ষমতা
(মিরাকেল )দান করেছি এবং তাঁকে পবিত্র আত্মার দিয়ে শক্তি শালী করেছি । আর আল্লাহ
যদি পছন্দ করতেন,
তবে
পরিষ্কার নিদর্শন আসার পরও তারা পরষ্পর বিবাদে লিপ্ত হতো না, কিন্তু
তাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেছে; তাই তাদের মাঝে কেউ বিশ্বাস এনেছে, আর কেউ
অস্বীকার করেছে। আর আল্লাহ যদি পছন্দ করতেন, তবেতো তারা পরস্পর লড়াই করতো না, কিন্তু
আল্লাহ তাই করেন,
যা তিনি
অভিপ্রায় করেন।’-সূরাহ
বাক্বারাহ,
অধ্যায়-২, আয়াত-২৫৩
'রাসূল
বিশ্বাস করেন তাঁর
পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ বিষয়ের উপর, আর বিশ্বাসীরাও (মুসলমানরাও)। তাদের
প্রত্যেকেই বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের
প্রতি এবং তাঁর রাসুলদের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসুলদের মধ্যে কোনো পার্থক্য
করিনা। তারা বলেঃ আমরা শুনেছি ও মান্য করেছি, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা
ক্ষমা করুন;
আপনার
কাছেই প্রত্যাবর্তন।'-সূরাহ
বাক্বারাহ,
অধ্যায়-২, আয়াত-২৮৫
২৫৩ ২৮৫ নং আয়াতদুটি কি তবে স্ব-বিরোধপূর্ণ?
নিশ্চয় না। ২৫৩ নং আয়াতে মর্যাদার উঁচু-নিচ আছে, কিন্তু ২৮৫ নং আয়াতে বিশ্বাসীরা (মুসলমান) 'রাসুলদের
মধ্যে কোনো প্রার্থক্য না করার' বিষয়ে বলছেন। আমরা জানি পবিত্র কুর'আনে কোনো স্ব-বিরোধ নেই। মহান আল্লাহ
আমাদের বোধশক্তি দিয়েছেন,
কাজেই এ
দুই আয়াত পরষ্পর পরিপূরক ধরে নিয়েই এর সঠিক অর্থ বোঝা যাবে। আর তা হলোঃ
নবী-রাসুলদের মর্যাদা শুধু
মহান আল্লাহর কাছে বিভিন্ন স্তরের, কিন্তু তা মানব জাতির কাছে বিচার্য্য নয়। কেবলমাত্র মহান আল্লাহই নিশ্চিত
জানেন কার মর্যাদা কী রূপ। আমরা সকল নবী-রাসুলদের(তাঁদের প্রতি শান্তি) সমান
দৃষ্টিতে দেখবো, আমাদের কাছে সকলে সমান
সন্মান প্রাপ্য, কোনো পার্থক্য করবো না।
Comments
Post a Comment