আল্লাহর কাছে কেনো আত্মসমার্পন ? -আইনুল
২২.আল্লাহর কাছে কেনো আত্মসমার্পন ?
-আইনুল বারী
---- --
---
সত্যিকার ‘ইলাহ’ হচ্ছেন সেই সর্বোচ্চ পবিত্র সত্তা যিনি মানুষ ও জগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, সৃষ্টিজগতের মহান প্রতিপালক, আমাদের কৃতকর্মের প্রকৃত বিচারক ও সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। তিনিই ‘আল্লাহ’। এমন মহান ইলাহ-এর কাছে বিনীত আত্ম-সমার্পনই হচ্ছে মানুষ ও সৃষ্টিজগতের একমাত্র ধর্ম, একেই বলে ইসলাম। কিন্তু এই আত্ম-সমার্পনের গভীর তাৎপর্য অনুভব করতে হলে পবিত্র কুর’আনের বাণী ভালোভাবে বুঝতে হবে। পবিত্র কুর’আনের বাণী শুধু উচ্চারণগত তেলোওয়াতের জন্য নয়; এ হলো চিন্তাশীলদের বোঝার জন্য, যা জেনে বুঝে জীবনে অনুশীলন করে আত্ম-শুদ্ধ হওয়ার জন্য।আশরাফুল মুখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হতে হলে আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির কঠোর অনুশীলন করে সে নাম অর্জন করে নিতে হবে।
২। আল্লাহর কাছে আত্মসমার্পন কথাটি মোটেও কথার কথা নয়।যখন কোনো বিশ্বাসী বলেন, আমি আল্লাহর উপর নির্ভরশীল, তাঁর উপরই ভরসা করি; তখন কথাটি শুধু কথার কথা ভাবলে ভুল হবে। এই নির্ভরশীলতা ও ভরসা আত্মসমার্পনেরই তাৎপর্য বহন করে। এই আত্ম-সমার্পন নিয়তির কাছে আত্মসমার্পন নয়।যদিও অবিশ্বাসীদের কাছে আল্লাহর কাছে আত্ম-সমার্পন নিয়তির কাছে আত্ম-সমার্পনের চেয়ে আলাদা কিছু বিশেষত্ব বহন করে না। বস্তুবাদী অন্ধত্ব, নাস্তিকতা বা অবিশ্বাস মানুষের নিজ কর্ম ও প্রকৃতির সম্ভারের উপর নির্ভরশীল। অবিশ্বাসীদের কাছে নিয়তির অর্থ অনিশ্চিত ভবিষ্যত, মানুষের উপর যার কোনো ক্ষমতা নেই।ঈশ্বর বা আল্লাহও নিয়তির মতো ক্ষমতাহীন, মানুষের তৈরি রূপকথা মাত্র। ক্ষমতার অধিকারী মানুষ, যার ভিত্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মানুষের অর্জিত জ্ঞান ও প্রচেষ্টা। এ অবিশ্বাসের দর্শন এমন এক বস্তুবাদী-প্রয়োগবাদী জীবন দর্শন, যা পাশ্চাত্যের (ও পরবর্তীতে প্রাচ্যেরও) জ্ঞান কাঠামো হয়ে আবির্ভুত হয়েছে, এবং পুঁজিবাদী ভোগবাদী বাজার অর্থনীতির অবিরত ছলা-কলায় শক্তি অর্জন করে চলেছে। কিন্তু যারা বিশ্বাসী, যারা ধার্মিক তাদের কাছে ঈশ্বর বা আল্লাহ অর্থহীন,অস্তিত্বহীন,ক্ষমতাহীন কোনো মীথ নয়, বরং সে সবের উৎস। বিশ্বাসী মানুষ তার প্রতিটি কাজে,উচ্চারণে ও চিন্তায় একমাত্র তাঁর মহান প্রতিপালক আল্লাহর কাছে আত্ম-সমার্পন করে, তাঁর উপরই নির্ভরশীল থাকে। সকল সম্মান, ক্ষমতা ও কর্তৃ ত্ব একমাত্র আল্লাহরই।
৩। আমরা যদি এক মহান প্রতিপালক ও সর্বময় কর্তৃত্ব পরায়ণের অস্তিত্ব মেনে তাঁর কাছে আত্ম-সমার্পন করি তবে আমাদের জীবনের অস্থিরতা ও অশান্তি দূর হবে। নয়তো আমরা বিভ্রান্তি,অশান্তি ও সভ্যতার সংকটে পতিত হতেই থাকবো। আল্লাহ'র কাছে আত্মসমার্পন আমাদেরকে বিনয়ী ও সত্যবাদী হতে শেখায়, আত্মত্যাগী ও নিরহংকার হতে শেখায়। চিন্তাশীল ও প্রজ্ঞাবান হতে শেখায় অন্যদিকে, অবিশ্বাসের ভোগবাদী জীবন-দর্শন শেখায় প্রভুত্বের ক্ষমতা আছে শুধু মানুষ ও তার প্রতিষ্ঠানগুলির মাঝে, এই শিক্ষা প্রকৃত অর্থে অশান্তি ও বিভেদ সৃষ্টিকারী ও প্রবঞ্চনাময়।
Comments
Post a Comment