ঐশ্বরিক একত্ববাদের মহান আহ্বান-কেনো এ আহ্বান?-আইনুল

১৮.ঐশ্বরিক একত্ববাদের মহান আহ্বান-কেনো এ আহ্বান?
-আইনুল বারী
--              ----          ---

ধর্মের বহু দেব-দেবতার মূর্তিপূজার আচার-অনুষ্ঠান থেকে আজ আমরা পৌঁচেছি আধুনিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভোগবাদী  সমাজের আদর্শায়িত ব্যাক্তি প্রভুত্বের কাছে আত্মসমার্পণের হীনতায়। একত্ববাদী ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, এমন প্রভুত্বের শাসন ন্যায় সমাজ গড়ে তুলতে  পারে না, যা পারে শুধু  একক সর্বোচ্চ প্রভুত্ব, যিনি মহান ঐশ্বরিক, প্রকৃত ন্যায়বিচারক- এটিই তাওহীদের(একত্ববাদের)  অনুপ্রেরণা।

(২) ধর্মের মূর্তিপূজা নিয়ে এই প্রবন্ধের জন্য আমার বেশি কিছু বলার নেই, শুধু এটুকু বলা পর্যাপ্ত মনে করছি যে মূর্তি পূজা হচ্ছে বিমূর্ত ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে বিভিন্ন ঘরণায় মূর্তায়ন করে উপাসনা করা। (কাজেই হিংস্র আক্রোশে মূর্তি ভাঙ্গলেই কি হৃদয়ের বিশ্বাস ভাংগা যায়? ) 

পুঁজিবাদের আধুনিক যুগে স্বার্থপরতায় নিমগ্ন ব্যক্তি-মানুষের প্রভুত্বের আশায় ছুটছে। ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ-এই ছুটে চলার অনুপ্রেরণাদায়ী এক জীবনীশক্তির নাম, এ হলো আধুনিক সমাজের মূল্যায়িত জীবনদর্শন।  কিন্তু মানুষের আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থবাদিতা বহুমাত্রিকতায় আজো পৃথিবীর সমাজকে  দ্বিধা-বিভক্ত করে রেখেছে। এই বিভক্তি সমাজদেহে বিষক্রিয়ার মতোই এক তীব্র সংক্রামণ চলছে। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা যে ভোগবাদী জীবন দর্শনের জন্ম দেয় ও তাকে আদর্শায়িত ও বিজ্ঞাপিত করে, তার স্বাভাবিক পরিণতি এই অশুভ স্বার্থপরতার আগ্রাসন ও সামাজিক নৈরাজ্যের নিষ্পেষণ।

(৩)গোত্রীয় সমাজের গোত্রপতিরা ও সামন্ত যুগের সামন্ত প্রভুরা, আর ক্রমাগত বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অধিপতিরা ছিলো সমাজের মহাভাগ্যবান কতিপয় শক্তিধর মানুষ, যারা নিজেরদের ঈশ্বরের মতো বা ঈশ্বরের নিযুক্ত প্রতিনিধি বলে মনে করতো, মনে করতো তাদেরই অনুকম্পায় বেঁচে আছেন তাদের অধীনস্ত প্রজাকূল। এমন গোত্রীয় ও সামন্তীয়, রাজকীয় প্রভুত্ববাদের বিরুদ্ধে সাধারণ প্রজারা তথা প্রান্তিক মানুষ যুগে যুগে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ও নানা বিপ্লব সংঘটন করেছে। সমাজ সংস্কারকগণ এসে নিবেদিতভাবে পরিশ্রম করেন, ইতিহাস কিছুটা এগোয়, এবং এক সময় প্রভুত্বের ক্ষমতার একাংশ বন্টিত হয় জনগণের মাঝে।

এভাবেই আধুনিক যুগে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের গোড়াপত্তন হয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতির পরিকল্পিত ভোগবাদী বাজার ব্যবস্থা থেকে উদ্ভুত ভোগবাদী জীবনদর্শনের মিম( meme) তন্তুজালের মতো ছড়িয়ে দেয় ব্যাক্তি-মানুষের মগজে-চিন্তায়-জীবন যাপনে, আদর্শে ও বিশ্বাসে। এই স্বার্থপর ও বিকৃত অর্থব্যবস্থাপনা সব কিছুকেই ভোগের বস্তুতে পরিণত করে পুরো সমাজটাকেই তার দাসে পরিণত করতে চায়, বা আত্মসাৎ করতে চায়। মুনাফালোভী দানবের দল মেধা, বিজ্ঞান, মানবতা, বিশ্বাস, তার উপযোগী জীবন দর্শনকেও  বাজারজাত করে; আর প্রত্যেক ব্যক্তিসত্তাকে তার তন্তুজালে আটকে ফেলে। আর সাধারণ ব্যাক্তি-মানুষকে প্রতি মূহুর্তে সেলিব্রেটি-সামন্ত-প্রভুর মতো ক্ষমতাবান হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে থাকে।  বৈষম্যমূলক স্বার্থপরতার কুটিল চোখ-রাঙ্গানি দিয়ে পরাস্ত করতে চায় আত্মত্যাগের, আত্মশুদ্ধির পবিত্র নৈতিকবোধকে

(৪)আজ হয়তো কিছু গোত্রপতি, সামন্তপ্রভু, রাজাধিরাজের ও রাষ্ট্র-নায়কের একচ্ছত্র প্রভুত্ব নেই; কিন্তু এই প্রভুত্ব প্রতি মূহুর্তে জন্ম নিচ্ছে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে, যারা তেমনই, যাদের মনের ভেতরটা প্রভু-প্রতিপালকের মতোই। যারা নিজের জন্য অনেক পূজারী চায়, প্রজা চায়, তাদের কাছে অনুগত দোয়াপ্রার্থী চায়, অবোধ ও হাতজোড়-বিনীত অনুসারী চায়, তারা চায় নিজেরদের ক্ষমতায় নিষ্পেষিত করতে অন্যদের। এ যুগে মূর্তিপূজা নয়, এই ব্যাক্তিপূজার কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তিই এ যুগের বড় অপরাধ। এ অপরাধ মানবতার বিরুদ্ধে।


(৫)ব্যক্তি মানুষের এই অন্যায় স্বার্থপরতা, এমন লোভ,  ক্ষমতার মালিক হয়ে প্রভুত্ব করার যে কুপ্রবৃত্তি-এর বিপরীতে ও যে কোনো প্রভুত্বের দাবী নিয়ে আসা অপশক্তির বিপরীতে এসেছে ঐশ্বরিক একত্ববাদের মহান আহ্বান। এ একত্ববাদকে মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্ব নয়, বরং  এক নিষেধ হিসেবে দেখে। মানুষের প্রতি মানুষের মানবিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মানব ঐক্যের প্রতি সতর্ক আহবান হিসেবে এসেছে তাওহীদের আহবান। পৃথিবীর বুকে সকল নবী-রাসুলগণ এ্মন আহ্বান নিয়ে এসেছেন নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে, তাদেরকে সতর্ক করেছেন, সত্য শিখিয়েছেন। 

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী