ইসলামের নামে এই জংগীবাদ কীভাবে থামাবো?-১ -আইনুল বারী

 ৫৪.ইসলামের নামে এই জংগীবাদ কীভাবে থামাবো?-১
-আইনুল বারী
-- --- -- --

আবার সন্ত্রাসী হামলা। ম্যানচেস্টার কনসার্টে মেরে ফেললো ২২টি নিরীহ তাজা প্রাণ, আহত করলো অন্তত ৫৯ জনকে। সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই। বুঝতে অসুবিধা হয় না এ হলো ইসলামের নামে আরেকটি লোন উলফ আত্মঘাতী সন্ত্রাসী আক্রমণ।


জংগীবাদের ফ্রানকেনস্টেইনকে পরাজিত করতে হলে  আঘাত করতে হবে এর একাডেমিক সোর্সকে। যে একাডেমিক সোর্স কুর'আনের শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করে বিশেষ ধরণের রাজনৈতিক ইসলামের ভাষ্য তৈরি করে রেখেছে। এ হলো কুর'আনের নির্দিষ্ট কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা ও  অসংখ্য বিভ্রান্তিকর হাদিসের এক অরাজকতার স্তুপ, যা ইসলাম ধর্ম চর্চার নামে বিচারবিযুক্তবাদী খবরদারী মোল্লাতান্ত্রিকতার বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে প্রত্যেকটি মুসলমানের উপর। 


জংগীবাদী রাজনৈতিক ইসলামের ভাষ্য তার কর্মী জনবল ও সমর্থক রিক্রুটের জন্য সবচেয়ে নিশ্চিন্তে যে কাজটি করে তা হলো, সাম্প্রদায়িক ঘৃণার প্রতিশোধপরায়ন মনস্তত্ত্বের চাষাবাদ। তারপর,  কোমলমতি  সদস্যের মনে সাম্প্রদায়িকতার র‍্যাডিকালাইজেশন সম্পন্ন হলে সে নিজের অজান্তে মানব থেকে দানবে রূপান্তরিত হতে থাকে। তখন একাডেমিক সোর্স থেকে বাছাইকৃত কোনো অপব্যাখ্যাত আয়াত বা বিভ্রান্তিকর হাদিসের মাধ্যমে তাকে মানবতাবিরোধী বর্বর হত্যাকান্ড ঘটানোর ও সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টির পক্ষে অনুমোদন দেয়া হয় । অথচ সে মনে করে সে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে কঠিন ও পবিত্র দায়িত্ব পালন করেছে।


আইন-শৃংখলা বাহিনী জংগীবাদী আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ প্রতিহত করতে জংগীদের ফিদায়ই কর্মকান্ডের পেছনে অপারেশনাল কাজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ও সফল হচ্ছে, কিন্তু সাম্প্রদায়িক ঘৃণার যে একাডেমিক চর্চা অবাধে চলছে সে জায়গাটিতে আজো কার্যকরভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়নি। জংগীবাদের সাথে ঘৃণা ছড়ানো মোল্লাতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িকতাকে পরাজিত করা অত্যন্ত জরুরি। সেটি আইন-শৃংখলা বাহিনী ও তাদের গোয়েন্দাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জ্ঞানী ও সচেতন ইসলামী চিন্তাবিদ ও মুফতি- মাওলানাদেরকেই এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কাজটি করতে হবে, তাদেরকেই জংগীবাদের একাডেমিক সোর্স নিয়ে গবেষণা করে বিভ্রান্তি দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে। যারা ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দিতে গিয়ে অজান্তে সাম্প্রদায়িকতা ও জংগীবাদের র‍্যাডিকালাইজেশন ঘটাচ্ছেন, তাদেরকেও সতর্ক ও পরিশুদ্ধ করা প্রয়োজন।


জংগীবাদের একাডেমিক সোর্স হলো অবিস্ফোরিত বারুদের মতোই। একে জ্বালাতে পারলে তা বিধ্বংসী বিস্ফোরক হয়ে জ্বলে উঠবেই। জ্বালানোর লোকজন ইসলামের ভিতরে যেমন আছে, বাইরেও আছে। কাজেই ভু-রাজনীতিরও যথেষ্ট পঠন-পাঠন প্রয়োজন। ৮০ এর দশকে তালেবান সৃষ্টির ইতিহাস সবার জানা, আজকের জংগীবাদী বুঝতে ঐ ইতিহাস আবারও জানতে হবে। 

আমি অনুরোধ করবো সহায়ক পাঠ হিসেবে দেখে নিবেন এ যুগের অসামান্য এক বুদ্ধিজীবী ইকবাল আহমেদের (Eqbal Ahmad) Terrorism Ours vs Theirs লেকচারটি, ইউটিউবে খুঁজে পাবেন আশা করি।

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী