মূর্তি কী দোষ, ইসলামের কী নিষেধ? -আইনুল
৭.মূর্তি কী দোষ, ইসলামের কী নিষেধ?
-আইনুল বারী
মূর্তি ও
ভাস্কর্যের সংজ্ঞা নিয়ে একটি বিতর্কের মতো শুরু হয়েছে। এতে জটিল ভাবে দেখার আদৌ কি কিছু
আছে? ভাস্কর্য যদি শিল্পকর্ম হয়, তবে মূর্তিও এক ধরণের ভাস্কর্য। তবে মূর্তি মাত্রই কেবল ভাস্কর্য নয়। কিছু
মূর্তি দেবতা ও দেবীর আরাধোনার জন্য, সেগুলি দেব-মূর্তি, সে সবের ধর্মীয় সারসত্তা আছে, সেগুলি কেবল ভাস্কর্য নয়। দেব-মূর্তির ভাস্কর্য মূল্য থাকলেও তার ধর্মীয়
মূল্যই মূখ্য।
সুপ্রীম
কোর্ট প্রাঙ্গণে যে ভাস্কর্য তাকে গ্রীক পৌরাণিক চরিত্র দেবী থেমিসের আদলে গড়া
বঙ্গীয় সংস্করণ বলা চলে। একজন নারীকে শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে বটে তবে ঐ দেবী
থেমিসেরই ভংগি, চোখ বাঁধা,
এক হাতে
দাড়িপাল্লা, আরেক হাতে তলোয়ার। এই দেবী হলেন তৎকালীন গ্রীক সমাজের সামজিক শৃংখলা ও ন্যায় বিচারের প্রতিভূ। সেখান থেকেই ন্যায়বিচারের মোটিফটি এসেছে। ভাস্কর দেবী থেমিসের বিশ্বাসকে নয়, ন্যায়বিচারের মোটিফটি তার শিল্পকর্মে এনেছিলেন। এ সত্য অস্বীকার করার বা
লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। কিন্তু এতো দেব-মূর্তি নয়। এতো ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে
নির্মিত হয়নি, বা ধর্মীয় পূজা-আর্চনার জন্যও প্রতিষ্ঠিত
নয়। তাহলে মূর্তিপূজার কথা বলে এর বিরুদ্ধে এতো রব উঠছে কেনো?
আমাদের
সমাজে যে ইসলাম প্রবল হয়ে আছে, তার মূল
শিক্ষা কুর'আন থেকে যতোটা নেয়া হয়েছে, হাদিস থেকে নেয়া হয়েছে অনেক বেশি। হ্যাঁ,
কুর’আন ও হাদিসের শিক্ষার মাঝে বিস্তর ফারাক আছে। কিন্তু সে অন্য আলোচনা। ইসলামের শিক্ষায় হাদিসের প্রাধান্যের কারণ কুর'আন না বোঝার ফল কিনা সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। হাদিসগুলি নিয়ে অন্ধত্ব বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অসুখের মতো। একজন সত্যিকার ঐতিহাসিক গবেষকের মতো
হাদিসগুলি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। ফলে অন্ধ অনুকরণে ইসলামের মধ্যে অনেক কিছু
সংযোজিত হয়ছে। তেমন একটি সংযোজন হলো,
ইসলামে
শুধু মূর্তিপূজাই নিষিদ্ধ নয়, যে কোনো
পশু প্রাণীর মূর্তি ও ছবিও নিষিদ্ধ।
পশু-প্রাণীর মূর্তি থাকলে নামায হবে না,
ফেরেশতা
ঘরে প্রবেশ করেন না। কুর’আনে এমন আজগুবি কথা নেই, এ হাদিস অনুসৃত অন্ধবিশ্বাস ।
নবী ইব্রাহীম ও মোহাম্মদ (তাঁদের প্রতি শান্তি) মূর্তি ভেংগেছিলেন, কাজেই সকল মুসলমানের উচিত মূর্তি
ভেংগে ফেলা, সহজ সমীকরণ। কিন্তু ইব্রাহীম নবী নিজের
অন্তরের অনুপ্রেরণা থেকে
মূর্তি পূজারীদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখানোর জন্য মূর্তি ভেংগেছিলেন। তিনি এভাবে
বোঝাতে চেয়েছিলেন মূর্তি্পূজা নামক ধর্মান্ধতাকে। কিন্তু মূর্তি ভেঙ্গেই
মূর্তিপূজারীদের বিশ্বাস কি তিনি ভাঙ্গতে
পেরেছিলেন? বরং তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে আগুনে
নিক্ষেপ করা হয়েছিলো, আল্লাহ আগুন থেকে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। নবী-রাসুলগণ ইসলাম প্রচার করেছিলেন আল্লাহর
জীবন বিধান অনুসারে, প্রজ্ঞার সাথে সে সব প্রয়োগের মাধ্যমে।
এখন মূর্তি
ভেঙ্গে তাওহীদের অর্থ বোঝাতে গেলে তা হবে হাস্যকর। এখন মূর্তি ভাংগার অর্থ হবে
মূর্খতা ও সন্ত্রাস। মূর্তির দোষ নেই,
মূর্তি
ভাংগার ব্যাপারে আল্লাহর নির্দেশ নেই,
বরং নিষেধ
আছে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতি অন্যায়- অত্যাচার-নিপীড়নের। তাহলে মূর্তির প্রতি
বিশ্বাস স্থাপিত না হলে সে মূর্তির কি দোষ?
বিশ্বাস
অন্তরের অনুপ্রেরণা, মূর্তির সাধ্য নেই তাকে কেড়ে নেবে। যে
মূর্তি শুধুই ভাস্কর্য, তা সৌন্দর্য শিল্পকর্মে উত্তীর্ণ হয়ে থাকলে তাতে ক্ষতি কোথায়? যদি না সে মূর্তি সাম্প্রদায়িকতার প্রতিমূর্তি হয়? অন্যের প্রতি উপেক্ষা ও ঘৃণার প্রকাশ না হয়? অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয় না হয়? যদি না কোনো অশুভ উদ্দেশ্য তার মাঝে লুকিয়ে থাকে?
সত্য কখনো কি মিথ্যাকে হারাতে পারে? না।
'সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই দিকে;
আর তাকে
ছাড়া তারা অন্য যাদেরকে ডাকে, তারা কোনো
সাড়া দেয় না; যেনো কেউ দু' হাত প্রসারিত করলো পানির দিকে,
যেনো পানি
তার মুখে পৌঁছে যায়, অথচ কোনভাবেই তা পৌঁছে না; অবিশ্বাসী অকৃতজ্ঞদের যতো আহবান তার সবই পথভ্রষ্টতা।'-সূরাহ রা'আদ(অধ্যায়-১৩), আয়াত-১৪
Comments
Post a Comment