মুক্তচিন্তা ও চিন্তার বর্নান্ধতা-আইনুল
২. মুক্তচিন্তা ও চিন্তার বর্নান্ধতা-আইনুল বারী
-- -- --
মুক্তচিন্তা আর চিন্তার অন্ধত্ব দুটি বিপরীত ধর্মী বৈশিষ্ট্য। মুক্তচিন্তা প্রসংগে আমার ভাবনা হলো, নিরংকুশ মুক্তচিন্তা বলে কিছু নেই। সব চিন্তা-শৃংখলাই এক সেট স্বতঃসিদ্ধ ধারণা বা অনুমান তথা বিশ্বাস থেকে নিঃসৃত, যেগুলিকে আমরা বলতে পারি যুক্তির প্রেমিস(premise)। এই প্রেমিস/গুলি কী কী হবে বা তাদের সংখ্যা কয়টি হবে তার উপর নির্ভর করবে চিন্তা জগতের পরিধি, প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য।
(২) চিন্তার অন্ধত্বও একই উপায়ে অনুসৃত হতে পারে স্বতঃসিদ্ধ অনুমান থেকে, যাকে বলে মূল বিশ্বাস। এই মূল বিশ্বাস অন্ধবিশ্বাসের মতোই যা অন্যান্য বিশ্বাসের ভিত্তিস্বরূপ। মূল বিশ্বাস থেকে চিন্তার প্রবাহ কিছু দূর যুক্তি শৃংখলার নিয়ম মেনে চলতে পারে, আবার এক সিদ্ধান্ত থেকে আরেক সিদ্ধান্তে পৌঁছুনোর সময় ফ্যালাসি তৈরি করে পথভ্রষ্ট হতে পারে, আবার যুক্তি শৃংখলার নিয়ম না মেনে বিচারবিযুক্ত ধারায় চিন্তার বর্ণান্ধতা তৈরি করে মানুষকে একটি অবোধ সংকীর্ণ বলয়ের মধ্যে আটকে ফেলেতে পারে। যখন যুক্তি-বোধ-বিবেকের পরিধিকে ছোট হয়ে যায় তখনই তাকে বলি চিন্তার অন্ধত্ব বা গোঁড়ামি।
(৩) সাধারণভাবে মুক্তচিন্তা বলতে আমরা যে কোনো সন্দেহ-সংশয়কে মুক্ত ভাবে প্রশ্ন করার মতো চিন্তার স্বাধীনতাকে বুঝি, তাকে অনেকে সত্যয অনুসন্ধানও বুঝে থাকেন। এই স্বাধীনতা কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত হলে আমাদের চিন্তার জগতের পরিধি বেড়ে উঠার সুযোগ পায় না। এ বাধা শুধু বোধহীনতা থেকেই আসে না, বরং চিন্তার প্রকৃতিই এমন যে তা এক একটি সন্ধিক্ষণে কোনো বা কোনো ভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। যেমন ধরা যাক, মুক্তচিন্তার ভিত্তি হিসেবে বস্তুবাদ ও ভাববাদের কথা, আমরা জানি এর দীর্ঘ দিনের ইতিহাস আছে। আধুনিক যুগে, সপ্তদশ শতক থেকে সুচনা করে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে বস্তুবাদ উনবিংশ শতকে এসে চিন্তা জগতের বিপ্লবী হয়ে উঠে। সে ধারাই চলছে বটে, তবে তার প্রখরতা বিশ শতকের শেষের দশকে অনেক কমে গেছে। গোঁড়া বস্তুবাদী বিশ্বাস সবকিছুকেই ‘বস্তু’তে পরিণত করে যান্ত্রিক সত্তার ফ্রেমে দীর্ঘকাল আটকে রেখেছে। আমাদের চিন্তা জগতের চারপাশে বাধার দেয়াল তৈরি করে রেখেছে।
(৪) আজ আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্যারাডাইম শিফটের কবলে পড়েছি, যা আমাদের মননে, চিন্তায়, দার্শনিক ভাবনায় বিপুল ভাবান্তর এনেছে। এখন, একবিংশ শতকে নতুন এক বার্তা পাচ্ছিঃ বস্তুবাদকে মনে হচ্ছে চিন্তা জগতের সংকীর্ণতা, বর্ণান্ধতার মতো একটি রোগ বলে মনে হয়। ধর্মান্ধতার মতোই গোঁড়ামিতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের মুক্তচিন্তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, এমনও মনে হয়। প্রকৃতির অন্তরালে এক মহান ঐশ্বরিকতার অনিবার্যতার অপার বিস্ময় অভিমুখে আমাদের অভিযাত্রা, আমাদের জ্ঞানচক্ষু আরও উম্মোচিত, আর সে দিকেই মগজের অনুরণন । ...
Comments
Post a Comment