আল্লাহর সার্বভৌমত্বের জ্ঞানতত্ত্ব আল্লাহু আকবারঃ তাওহীদের দর্শন -আইনুল
২৫.আল্লাহর সার্বভৌমত্বের জ্ঞানতত্ত্ব
আল্লাহু
আকবারঃ তাওহীদের দর্শন
-আইনুল বারী
-- --- ---
১) ‘আল্লাহু আকবার’ ইসলামী জীবনে অনুভব করি সবচেয়ে বেশি
উচ্চারিত ধ্বনি, বা উচ্চারণ,
যাকে বলা
হয় তকবীর। কিন্তু এই পবিত্র উচ্চারণকে সন্ত্রাসীরা ও ঘৃণা প্রচারকারীরা ‘রণহুংকার’ হিসেবে মিলিয়ে প্রচার করছে। কিন্তু এ কি
রণ হুংকার? নিশ্চয় তা নয়।একটু লক্ষ করলে বোঝা যাবে ‘আল্লাহু আকবার’ এই পবিত্র ধ্বনির মধ্যেই আছে ঐশ্বরিক
অনন্যতা বা তাওহীদের মূল সূত্র।
২) ‘আল্লাহু আকবার’ কথাটির অর্থ কী?
‘আল্লাহু আকবার’ কথাটির অর্থ নিয়ে অনেকেই দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বাংলায় সহজ অনুবাদ করি ‘আল্লাহ মহান’ । ইংরেজিতে ‘আকবার’ শব্দের অর্থ করি great, greater, greatest| কিন্তু আকবার শব্দের সঠিক অর্থ হচ্ছে , greater than. | কেউ কেউ বিপাকে পড়েন এটা ভেবে যে, greater -তো দুটি বস্তুর মধ্যে তুলনা বোঝাবে, সেক্ষেত্রে আল্লাহ সীমিত হয়ে যান। আল্লাহতো,greatest|
নিশ্চয়
তাই। greater than..বলতে নির্দিষ্ট দু’য়ের মধ্যে তুলনা বোঝায় না। সে অর্থে আল্লাহ greater
নন। আরবী
ব্যাকরণে এটি ism tafdeel ক্যাটাগরিভুক্ত, এটি superlative নির্দেশক।
আমরা যখন
বলি ‘আল্লাহ আকাবার’ তখন তা শুধু এটুকু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, পুরো কথাটি হলো, ‘আল্লাহু আকাবার মিন কুল্লি শায়ইন’ অর্থাৎ তিনি হচ্ছেন যে কোনো কিছুর তুলনায় মহান বা শ্রেষ্ঠ, greater (than anything) । আরো বিস্তৃত ভাবে বললে , ‘Allah is greater...than whatever you happen to
believe in’| যখন বলা হয়
‘আল্লাহু আকাবার’ তখন তা পুরো কথাটিকেই ব্যঞ্জিত (imply) করে। ‘মিন কুল্লি শায়ইন’ বা ‘যে কোনো কিছুর তুলনায়’ অংশটুকু উহ্য থাকে। কাজেই প্রকারন্তরে ‘আল্লাহু
আকবর’ অর্থ হলো Allah
is greatest । এ হলো
স্রষ্টার কাছে সব কিছুর আত্ম সমর্পণ। এ কথার অর্থ ভালোভাবে বুঝতে হয়তো আরেকটু বিশদ
ব্যাখ্যা প্রয়োজন। সে চেষ্টাটাই করছি।
৩) মনে
প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয়, Allah is greatest এভাবে না
বলে একটু ঘুরিয়ে greater (than anything) উপস্থাপিত
হওয়ার ফলে অর্থের দ্যোতনায় কোনো পরিবর্তন ঘটেছে কিনা । হ্যাঁ হয়েছে। একটু চিন্তা
করলে ব্যাপারটা পরিষ্কার বোঝা যায় যে এইঅর্থটি সরাসরি নির্দেশিত না হয়ে নিজস্ব
ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছে।
এখন প্রশ্ন
হলো, কেনো?
greater (than anything) কথাটি greatest কথাটির চেয়ে অনেক ব্যঞ্জনাময় ও
তাৎপর্যপূর্ণ। greatest সর্বোচ্চ অবস্থানকে নির্দেশ করলেও তা
ধারণাগত দিক দিয়ে একটি স্ট্যাটিক অবস্থাকে বোঝায়। greatest
হলেও তা
ত্রুটিপূর্ণ বা সীমাবদ্ধ হতে পারে। প্যাগানরা যখন দেব দেবীর পূজা করতো তখন তাদের
মধ্যে প্রধান দেবতা একজন থাকতেন, তিনি হলেন greatest| কিন্তু তিনি সকল দেব দেবীর মধ্যে greatest হলেও বৈশিষ্ট্য ও ক্ষমতায় সীমিত । আল্লাহ
বা ঈশ্বর যে কোনো সীমিত দেবশক্তি বা সৃষ্টতত্ত্বের দর্শন বা চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিক
মতবাদের চেয়েও বড়। অর্থাৎ greater (than anything) যার অর্থ
ঈশ্বরিক সত্তার বিকল্প হিসেবে বা প্রতিদ্বন্দ্বী যা কিছুই আসুক না কেনো আল্লাহ তার
চেয়েও বড়| যখন greatest’
কথাটি
প্রতি মুহুর্ত অন্যের সাথে নিজের তুলনাকে স্পষ্ট করে না তখন greater (than anything) কথাটির মাধ্যমে ‘যা কিছুই আল্লাহর প্রতি শিরক বা প্রতিদ্বন্দ্বী আমাদের ধারণাগত হতে চায় তার
চেয়েও আল্লাহ শ্রেষ্ঠতর বা মহান’ এই ঘোষণা
আসে।
আমরা অনুধাবন করি আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ। এই ঘোষণা আমাদের চিন্তাশক্তিকে
আশ্বস্ত করে, আর সঠিক পথের নির্দেশ দেয়। আমরা অনুধাবন করি
আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব (greater
than anything ) এমন এক চলমান অর্থবোধক অধরাকে নির্দেশ করে যার মধ্যে রয়েছে greatness সম্পর্কিত infinite
regress বৈশিষ্ট্য।
এ হলো সেই পরম logo centric predicament! যা আমাদের
বুদ্ধিসত্তাকে মেনে নিতেই হয়। Allah exists beyond
any limit বা আল্লাহ মানুষের জ্ঞানরাজ্যের বাইরে অবস্থান করেন, তাঁর অস্তিত্ব আংশিক অনুভব করা যায়,
কিনতু
তাঁকে মানুষের চিন্তায় পূর্ণররূপে পাওয়া যায় না বা সঙ্গায়িত করা যায় না।
এখন এই
অর্থ একটু মিলিয়ে নেই পবিত্র কুরআনের বাণীতে,
‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই,
তিনি
চিরঞ্জীব, সবকিছুতেই পরিব্যাপ্ত। তাঁকে না তন্দ্রা
না নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে এবং আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ
করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির
সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো
কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু
যতোটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আকাশ ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে।
আর সেগুলো ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং অতি মহান।’ -(আয়তুল কুরসী)
Comments
Post a Comment