প্রকৃতিই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শেষ সীমা, আর সবচেয়ে নিখুঁত বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা। যা এক মহাজ্ঞানীর পরিকল্পনায় রচিত হয়েছে। চিন্তাশীল বিশ্বাসী মানুষের কাছে এ হলো নিদর্শন।-আইনুল

১. প্রকৃতিই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শেষ সীমা, আর সবচেয়ে নিখুঁত বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা। যা এক মহাজ্ঞানীর পরিকল্পনায় রচিত হয়েছে। চিন্তাশীল মানুষের কাছে এ হলো নিদর্শন।-আইনুল বারী

---                  ---                    ---
প্রকৃতিই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সীমা, আর সবচেয়ে নিখুঁত বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা। যা এক মহাজ্ঞানীর পরিকল্পনায় রচিত হয়েছে। চিন্তাশীল মানুষের কাছে এ হলো নিদর্শন।  ---     ---    ---

‘তিনিই আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দিয়ে তোমাদের জন্য খাদ্য হিসেবে ফল উৎপাদন করান, আর নৌযানসমূহকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, যেনো তাঁর আদেশে সমুদ্রে চলাচল করে, আর তোমাদের সেবায় নিয়োজিত(উপযোগী) করেছেন নদীসমূহ।’-সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩২

‘তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, এ থেকে তোমরা পান করো, আর এ থেকেই উদ্ভিদকূল জন্মায়, যেখানে তোমরা পশুচারণ করো।’-সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১০

‘তুমি কি দেখো না যে,আল্লাহ মেঘমালা সঞ্চালিত চালনা করেন,পরে তা একত্র করেন,পরে তা স্তরীভূত করেন,আর তুমি কি দেখো না যে তা থেকে বৃষ্টি নির্গত হয়; আকাশমন্ডলীর শিলাস্তুপ হতে তিনি শিলা বর্ষণ করেন। আর তা দিয়ে যাকে ইচ্ছা আঘাত করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা দূরে সরিয়ে নেন। তার বিদ্যূত ঝলক দৃষ্টি হরণ করতে চায়।’-সুরাহ নূর(অধ্যায়-২৪),আয়াত-৪৩

‘আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যেও তোমাদের জন্যে শিক্ষা রয়েছে; আমি তোমাদেরকে পান করাই তাদের উদরস্থ থেকে, নিঃসরিত বর্জ্য ও রক্ত থেকে, বিশুদ্ধ দুধ, যা উপাদেয় পানকারীদের কাছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৬

‘আর খেজুর ও আংগুর ফল থেকে, তোমরা তৈরি করো কড়া পানীয়(মাদক)ও উত্তম খাবার; এতে নিশ্চয় বোধ সম্পন্ন লোকেদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’-সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৭

‘তারপর সব রকমের ফল আহার করো, আর তোমার প্রতিপালকের সরল পথে চলো; তার উদর থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন বর্ণের পানীয়, তাতে আছে মানুষের জন্যে রোগের প্রতিকার; নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্যে আছে নিদর্শন।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৯

‘আর তোমাদের জন্য তিনি পৃথিবীতে যা কিছু রং-বেরঙের বস্তু বহু গুণে ছড়িয়ে দিয়েছেন; নিশ্চয় স্মরণকারীদের জন্য তাতে নিদর্শন
রয়েছে।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৩

‘আর আপনার প্রতিপালক মৌমাছিকে শিক্ষা দিয়ে বললেনঃ মৌচাক গড়ো পাহাড়ে, গাছে ও মানুষের বসতিতে।’ -সূরাহ নাহল (অধ্যায়-১৬)-আয়াত-৬৮

‘আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন, উভয়ে নিরবচ্ছিন্ন নিজেদের পথে চলে, রাত ও দিনকে তোমাদের সেবায় লাগিয়েছেন।’-সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩৩

‘তিনিই কাজে নিয়োজিত করেছেন সমুদ্রকে, যেনো তা থেকে তোমরা কোমল তাজা মাংস খেতে পারো ও তা সেঁচে বের করতে আনতে পা্রো অলঙ্কারাদি তোমাদের পরিধেয় সজ্জার জন্য; আর তুমি নৌযানসমূহকে এর বুক চিরে চলতে দেখো, যেনো তোমরা আল্লাহর প্রাচুর্যময় অনুগ্রহের সন্ধান করতে পারো, আর যেনো (অনুগ্রহ স্বীকার করে তাঁর প্রতি) কৃতজ্ঞ হও।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৪

‘আর পথ নির্ণয়ক বহু চিহ্ন; আর নক্ষত্রের সাহায্যে যেনো তারা চলাচলের পথের নিশানা পায়।’ -সূরাহ নাহল(অধ্যায়-১৬), আয়াত-১৬

‘আর আমি ভুপৃষ্ঠকে বিস্তৃত করেছি, আর তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি, আর সেখানে সব ধরণের বস্তু সুপরিমিতভাবে উৎপন্ন করেছি।’-সূরাহ হিজর(অধ্যায়-১৫),আয়াত-১৯

‘আর আমি তোমাদের জন্য সেখানে জীবিকার উপকরণ সৃষ্টি করেছি, আর তাদের জন্যও যাদের সরবরাহকারী তোমরা নও।’-সূরাহ হিজর(অধ্যায়-১৫),আয়াত-২০

'আর তোমাদের সৃষ্টিতে, এবং যে সকল বিচরণশীল প্রাণী তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন, তারা নিদর্শন দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য।'- সুরাহ জাসিয়াহ(অধ্যায়-৪৫),আয়াত-৪

‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি, তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে, যারা জ্ঞানী তাদের জন্য বহু নিদর্শনাবলী।’-সুরাহ রূম, আয়াত-২২

‘আর একইভাবে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, বিচরণশীল জন্তু, গবাদি পশু? আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে; নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’-সুরাহ ফাতির, ৩৫ঃ২৭,২৮

'তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তারপর উপত্যকা সমূহে নিজ নিজ পরিমাণ অনুসারে স্রোতধারা প্রবাহিত হয়, তারপর প্রবল জলরাশির বন্যা ফেনাকে ভাসিয়ে তোলে, যেমন অলঙ্কার ও তৈজসপত্র বানানোর সময় আগুনে উত্তপ্ত গলানো ধাতুর উপর ফেনা উঠে; এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের উপমা দেন; ফেনা আবর্জনার মতো ভেসে চলে যায়, আর মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তা জমিনে থেকে যায়; আল্লাহ এভাবেই দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।'-সূরাহ রা'দ(অধ্যায়-১৩),আয়াত-১৭

‘আর যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছো, তার সবই তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন; আর তোমরা যদি আল্লাহর অনুগ্রহ(নেয়ামত) গণনা করো, তা গুণে শেষ করতে পারবে না; নিশ্চয় মানুষ অত্যন্ত অন্যায়কারী, অকৃতজ্ঞ।’ -সূরাহ ইব্রাহীম(অধ্যায়-১৪),আয়াত-৩৪

'অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না আকাশ ও পৃথিবী একসাথে মিশে ছিলো, আর আমিই তা পৃথক করলাম। পানি হতে সব প্রাণী সৃষ্টি করলাম, তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?'-সুরাহ আনবিয়া, আয়াত-৩০ 

'বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো ও দেখো, কীভাবে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন, অতঃপর সমাপ্তির সৃষ্টির উদ্ভব ঘটান। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর উপর শক্তিমান।'-সূরাহ আনকাবুত(অধ্যায়-২৯),আয়াত-২০

'নিশ্চয় ভূমন্ডলে ও পৃথিবীতে বিশ্বাসীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।'- সুরাহ জাসিয়াহ(অধ্যায়-৪৫),আয়াত-৩

     ------                                                 

যদি একটু ধ্যানমগ্ন হয়ে প্রকৃতির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা ও প্রকৌশল নিয়ে চিন্তা করি তাহলে আশ্চর্য হয়ে দেখবো এ যেনো সেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নেরই সর্বোচ্চ সীমা, যা এক মহাজ্ঞানীর পরিকল্পনয় রচিত হয়েছে, এর চেয়ে ব্যতিক্রমী ভাবনার কিছু থাকে না।

মহা সমুদ্রের বিপুল লবনাক্ত পানি যা আমাদের খাবার অযোগ্য, খাবার উপযোগী মিষ্টি পানি আমরা কোথায় পাবো?  আমরা কি এমন প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছি, যা দিয়ে বিপুল লবণাক্ত পানিকে রাতারাতি মিষ্টি পানিতে রূপান্তর করে খাবার যোগ্য করা সম্ভব?  অথচ কতো সহজ স্বয়ংক্রিয় ভাবে পানিচক্রে বিরতি হীন সমুদ্রের লবণাক্ত পানি জলীয় বাষ্প আকারে মেঘমালায় উঠে তারপর অফুরন্ত মিষ্টি বিশুদ্ধ পানিতে রূপান্তরিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থলভাগে বর্ষিত হচ্ছে? তারপর সে পানি জমিয়ে রাখতে আমরা কি পারতাম সারা পৃথিবী জুড়ে বিশাল বিশাল জলাধার বানাতে? অথচ বর্ষণের সে পানি নদি-নালা-খালে-বিলে সঞ্চিত হচ্ছে, বাকি পানি ভূগর্ভের রিজার্ভ ট্যাংকে গিয়ে জমা হচ্ছে। ভূমিতে অবিশ্বাস্য বিপুলায়তনে সেচের ব্যবস্থা হচ্ছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে, যা থেকে নানা জাতের টাটকা উদ্ভিত, শস্য ও ফল-মূল জন্মাচ্ছে! সে খাবার ভাণ্ডার পৃথিবীর সকল প্রাণীর জন্য যথেষ্ট। এমন নিখুঁত প্রযুক্তির উদ্ভাবন তা দিয়ে ও বিভিন্ন বস্তুর সৃষ্টি ও অভাবনীয় বন্টন-ব্যবস্থাপনা ও শৃংখলা - আমাদের পক্ষে আদৌ কি সম্ভব?

আমরা চাইছি আমাদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত সব কিছু নিখুঁত এক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে- এ লক্ষ্যে আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি অব্যাহত আছে। এন্টি-ভাইরাস, রোবোটিক্স, ন্যানো টেক, অটোমেশনের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সমস্যাগুলির সহজ সমাধান করতে। অথচ প্রকৃতিতেই অনেক আগে থেকে সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনার নিখুঁত ভারসাম্য বিরাজ করছে, আমরা যা নষ্ট করতে ব্যস্ত। প্রকৃতির মহাযজ্ঞ এই অবিশ্বাস্য নিখুঁত ভারসাম্যপুর্ণ ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত রয়েছে প্রাণিজগতের অগণিত প্রজাতির শ্রমিকদল, উদ্ভিতকূল, এমনকি প্রাকৃতিক বিভিন্ন জড়বস্তুও যেমন পাহাড়, নদী, সূর্য, চন্দ্র- যারা স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিজের নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, যাদের একের সাথে অন্যে যুক্ত হয়ে আছে । কেউ পৃথিবীর প্রতিদিনের জমে ওঠা আবর্জনা পরিষ্কার করছে, কেউ কার্বনকে শুষে নিয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রাকে উপযোগী রাখছে, কেউ অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রেখে জীবনকে সচল রাখতে সাহায্য করছে। এ গনণা শেষ হবার নয়।

এখানে মানুষের কি দায়িত্ব? মানুষ কি প্রকৃতির ভারসাম্য ধ্বংস করে পৃথিবীকে ধ্বংসের কাজে ব্যস্ত থাকবে? নৈতিক ও বুদ্ধিসত্তার অধিকারী চিন্তাশীল মানুষের ভূমিকা কি হওয়া উচিত নয় একজন সৎ নিয়োগপ্রাপ্ত তদারকিকারীর? প্রকৃতির প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনাকে বুঝে নিয়ে সে অনুসারে নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে মানবসভ্যতাকে সোজা পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া? প্রকৃতির শ্রমিকদের প্রতি যত্নশীল হয়ে কাজের পরিবেশকে সচল রাখতে সাহায্য করা?

সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও শান্তির সন্ধানে, জীবনকে সহজ করতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের পেছনে আমরা অবিরত ছুটছি। উন্নত প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা ও প্রকৌশল আমাদের জীবনকে প্রতিদিন পালটে দিচ্ছে। তবুও আমরা কি পেরেছি প্রকৃতি সৃষ্টিকারী মহাজ্ঞানীর সৃষ্টি ও প্রজ্ঞার কাছাকাছ যেতে? প্রকৃতির মাঝে এইযে অফুরন্ত অনুগ্রহ তা কি আজো আমরা স্বীকার করেছি? আমরা কি প্রকৃতি ও মানুষের স্রষ্টা ও প্রতিপালকের কাছে এজন্য কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছি? 

(পুরোনো লেখা, আংশিক সম্পাদিত।)

Comments

Popular posts from this blog

'শুন হে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।' : আমি মানুষ বনাম আমি মুসলমান-আইনুল বারী

অপব্যাখ্যাত আয়াত ৪ঃ৩৪- স্ত্রীকে প্রহার করা কি ইসলামে অনুমোদিত?-আইনুল বারী

সত্য অনুসন্ধানী ধার্মিকের চোখে নাস্তিক্যবাদী সংশয় ঘৃণার বস্তু নয়, কেননা জ্ঞানের সংশয়ে পাপ নেই, জ্ঞান চর্চায় ঘৃণা বিদ্বেষের প্রয়োজন নেই -আইনুল বারী